মিরসরাইয়ে রেলওয়ের ৫টি স্টেশনের ৪টিই বন্ধ

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আবু সাঈদ ভূঁইয়া, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এক সময়কার ব্যস্ততম ৪টি রেল স্টেশনে এখন সুনসান নিরবতা। ট্রেন আসা-যাওয়া করলেও স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় থামে না কোন গাড়ি। ফলে অযত্ন অবহেলায় চুরি হয়ে যাচ্ছে স্টেশনগুলোর মূল্যবান যন্ত্রপাতি। অনেক স্টেশন পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানায়। বেদখল হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের অনেক জায়গা। ভোগান্তিতে পড়েছে মিরসরাই-সীতাকুন্ডের যাত্রীরা। যাত্রীরা বাসে গিয়ে গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেন। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ১৪৯ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ নির্মিত হয়েছিল। লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৬৯ কি মি রেললাইন জণসাধারণের জন্য খোলা হয়। চট্টগ্রাম-কুমিল্লা লাইনের স্টেশন হিসেবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চিনকি আস্তানা রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়। পাশাপাশি নির্মাণ করা হয় নিজামপুর, বড়তাকিয়া, মিরসরাই ও মন্তাননগর রেলওয়ে স্টেশন। কিন্তু বর্তমানে চিনকির আস্তানা রেলওয়ে স্টেশনটি চালু থাকলেও অন্য ৪টি বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় চুরি হয়ে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় মূল্যবান যন্ত্রাংশ।

চিনকির আস্তানা রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, চিনকির আস্তানা রেলওয়ে স্টেশনের উপর দিয়ে চলাচল করে সূবর্ণ এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, গোধুলী এক্সপ্রেস, উদয়ন এক্সপ্রেস, মেঘনা এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, তূর্ণা এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইল, সাগরিকা এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, লাকসাম কমিউটার ও লোকাল ট্রেন। বর্তমানে চিনকির আস্তানা স্টেশনে থামে ৩টি ট্রেন। এগুলো হলো, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, সাগরিকা এক্সপ্রেস ও নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস। ৩টি ট্রেনে দৈনিক ১৫০-২০০ জন যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া বড়তাকিয়া স্টেশনে শুধুমাত্র নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস থামে। লোকবল সংকটের কারণে বন্ধ থাকা স্টেশনগুলো চালু করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেন- রেলওয়ে কর্মকর্তারা।

এদিকে ২০০৮ সালে আয় কমে যাওয়া ও লোকবল সংকটের কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ মিরসরাই স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মিরসরাই সদর রেল স্টেশন পুনরায় চালু লক্ষ্যে বিভিন্ন রকম উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এগুলোর মধ্যে ছিল রেল স্টেশনে আধুনিক সিগন্যালিং, নতুন ডিজিটাল কক্ষ নির্মাণ, লাইন সংস্কারসহ বিভিন্ন আধুনিকায়ন কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু পরে আবারো থেমে যায় কার্যক্রম। সে থেকে আজ অবধি গুরুত্বপূর্ণ সদর রেল স্টেশনটি চালু করা হয়নি।

সরেজমিনে সদর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত মিরসরাই রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, জনমানব শূন্য স্টেশনটিতে স্থানীয়রা ধান শুকাচ্ছেন। এক পাশে গরু ও ছাগল বিচরণ করছে। স্টেশনের বিভিন্ন কক্ষের মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। এসময় কথা হয় আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে এক সময় মিরসরাই সদর স্টেশনটি জমজমাট ছিল। পণ্য উঠানামাসহ সব ধরনের কার্যক্রম চলতো। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরেও স্টেশনটি বন্ধ রয়েছে। ফলে স্টেশনের বরান্দায় স্থানীয়রা ফসল, খড় রাখাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিনকি আস্তানা স্টেশন মাস্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, লোকবল সংকটের কারণে স্টেশনগুলো বন্ধ রয়েছে। একটা স্টেশন বন্ধ থাকলে তার পরবর্তী স্টেশনটির সঙ্গে সঠিক সিগন্যাল পাওয়া যায় না। ফলে ট্রেন নির্দিষ্ট গতিতে চলাচল করতে পারে না। লোকবল নিয়োগ দেওয়া হলে স্টেশনগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।