বিএসসিতে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি নতুন জাহাজ
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) নিজস্ব অর্থে কেনা দুটি জাহাজের প্রথমটি আগামী সেপ্টেম্বরে সংস্থাটির বহরে যুক্ত হবে। দ্বিতীয়টি যুক্ত হবে নভেম্বরের শেষে। অর্থাৎ আগামী আড়াই মাসের মধ্যে সংস্থাটির বহরে নতুন জাহাজ দুটি যুক্ত হতে যাচ্ছে। বিএসসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নতুন এই দুই জাহাজের পাশাপাশি আরও তিনটি নতুন জাহাজ কেনার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে সংস্থাটি। সরকারি অর্থায়নে এই তিন জাহাজ কেনার জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও প্রণয়ন করা হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় বিএসসি। এ বিষয়ে বিএসসির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে নির্মাণাধীন রয়েছে, এমন জাহাজ প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে কেনা হচ্ছে। এতে কম সময়ে বিএসসির বহর সমৃদ্ধ হচ্ছে। নতুন আরও যে তিনটি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেগুলোও নির্মাণাধীন অবস্থায় কেনা হবে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে এসব জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হওয়ার আশা রয়েছে। বিএসসির বহরে বর্তমানে পাঁচটি জাহাজ রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকার এবং দুটি সাধারণ পণ্য পরিবহনের উপযোগী বাল্ক জাহাজ। নতুন দুটি বাল্ক জাহাজ যুক্ত হলে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা বেড়ে সাতটিতে উন্নীত হবে। নতুন দুই জাহাজ থেকে বছরে বাড়তি ১৫০ কোটি টাকা আয় হতে পারে বলে বিএসসি আশা করছে। আর এই দুই জাহাজে পালাক্রমে বছরে ১৫০ নাবিকের কর্মসংস্থান হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। নতুন দুটি জাহাজ কেনার এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত জুনে। তিন জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে নিজস্ব অর্থায়নে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছিল সংস্থাটি। এরমধ্যে দুটি প্রস্তাব কারিগরিভাবে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
গত মঙ্গলবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৩৬ কোটি টাকায় জাহাজ দুটি কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এই জাহাজ দুটি সাধারণ পণ্য পরিবহনের উপযোগী বাল্ক জাহাজ। প্রতিটির পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টন। বিএসসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটি চীনের নেন ইয়াং শিপইয়ার্ড থেকে জাহাজ দুটি সরবরাহ করবে। এরমধ্যে একটি জাহাজের নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এটি সেপ্টেম্বরের শেষে বিএসসির কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। অন্যটি জাহাজের কাজ ৫০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। এই জাহাজ নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে হস্তান্তর হওয়ার কথা রয়েছে। চুক্তির আগে জাহাজ দুটির অবস্থা দেখে আসার জন্য একটি দলের ২২ সেপ্টেম্বর চীনের জাহাজ নির্মাণ কারখানা সরেজমিন পরিদর্শনের কথা রয়েছে। নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার নেতৃত্বে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেকসহ চার সদস্যের দলটি পরিদর্শন শেষে এ মাসেই চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। বিএসসির কর্মকর্তারা জানান, নির্মাণাধীন অবস্থায় জাহাজ কেনার কারণে খুব দ্রুত সেগুলো সংগ্রহ করা যাচ্ছে। কারণ, দরপত্রের মাধ্যমে নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে তিন বছরের বেশি সময় লাগত। ১৯৭২ সালের জুনে ‘এমভি বাংলার দূত’ জাহাজের মাধ্যমে বিএসসির সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ব্যবসা শুরু হয়। ১৯৮২ সালের মধ্যে ২৭টি জাহাজ যোগ হয় এই সংস্থার বহরে। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা ৩৮-তে উন্নীত হয়, তবে ১৯৯১ সালের পর এই সংস্থার বহরে নতুন কোনো জাহাজ যুক্ত হয়নি। উল্টো জাহাজের সংখ্যা কমে এক পর্যায়ে দুটিতে নেমে আসে। এরপর ২০১৮-১৯ সালে সংস্থাটি ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকায় ৬টি নতুন জাহাজ সংগ্রহ করে। এর মধ্যে একটি জাহাজ দুর্ঘটনায় পরিত্যক্ত হয়। নতুন দুটি জাহাজ যুক্ত হলেও বেসরকারি খাতের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে বিএসসি। এই শিল্পে বেসরকারি খাত যাত্রা শুরু করে সরকারি খাতের যাত্রা শুরুর পাঁচ বছর পর। ১৯৭৮ সালে প্রায় ১০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার ‘এমভি আল সালমা’ জাহাজ নিবন্ধনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে এই ব্যবসা শুরু হয়। বেসরকারি খাতে প্রথম এই ব্যবসা শুরু করে এটলাস শিপিং লাইনসের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানাউল্লাহ চৌধুরী। বর্তমানে বাংলাদেশে বেসরকারিখাতে ১৬টি কোম্পানির ৯৫টি জাহাজ রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি জাহাজ রয়েছে কেএসআরএম গ্রুপের, ২৮টি। আর মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) রয়েছে ২৫টি জাহাজ। মোট ১০টি জাহাজ নিয়ে এরপরের অবস্থান আকিজ শিপিংয়ের। কোম্পানি বা সংস্থা হিসেবে বিএসসির অবস্থান ষষ্ঠ। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের বড় অংশই সমুদ্রপথে আনা-নেওয়া করা হয়। প্রতিবছর এই বাণিজ্য বাড়ছে। গত অর্থবছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৩ কোটি টন পণ্য পরিবহন হয়। কনটেইনার, তেল পরিবহনকারী জাহাজ ও সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজে এসব পণ্য পরিবহন হয়। এসব পণ্যের বড় অংশই পরিবহন হচ্ছে বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে। কারণ, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা কম। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জাহাজের বহর বাড়লে নিজেদের আমদানি পণ্য পরিবহন করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যায়। আবার বিদেশ থেকে পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা যায়। দেশি পতাকাবাহী জাহাজে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। সেই সঙ্গে নতুন নাবিকেরাও প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। জানতে চাইলে সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পে শীর্ষস্থানে থাকা কেএসআরএম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মেহেরুল করিম জানান, জাহাজের বহর বেশি হলে দেশি নাবিকদের কর্মসংস্থান, নিজেদের পণ্য পরিবহন ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। বিএসসি নতুন নতুন জাহাজ কেনার উদ্যোগ এই সুযোগ আরও বাড়াবে।
