রাউজানে মাল্টার বাম্পার ফলন
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কামরুল ইসলাম বাবু, রাউজান (চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রামে রাউজানের কদলপুর গ্রামের ওমান প্রবাসী হামিদ ইউটিউব দেখে ভিয়েতনামি হলুদ মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে এসে তার নিজস্ব খালি জায়গায় মাল্টা বাগান গড়ে তুলেন। প্রায় ২ বিঘা জমিতে এই উন্নত জাতের মাল্টার চাষ শুরু করেন তিনি। চার বছরের মধ্যে তার মাল্টা চাষ ব্যাপক সাফল্য এনে দিয়ে, এলাকার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সরেজমিনে হামিদের বাগান ঘুরে দেখা যায় গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে ভিয়েতনামি হলুদ রঙের মাল্টা। মাল্টার ওজনে গাছগুলো মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। প্রায় চার শতাধিক গাছে ধরেছে বিপুল পরিমাণ মাল্টা। বাগান থেকেই ২৫০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে ফরমালিন মুক্ত এই ভিটামিন-সি যুক্ত ফল। প্রবাসী হামিদ জানিয়েছেন, ২০২২ সালে বাগান শুরু করেন, বাগান করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা। প্রথম বছর মাল্টা হারভেস্ট করিনি। গত বছর হতে বাণিজ্যভাবে মাল্টা উৎপাদান করা হয়। এবার প্রায় ৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির করে আয়ের আশা করছেন তিনি। সারা চট্টগ্রামে হলুদ জাতের মাল্টা বাগান এটি বলে দাবি করেন তিনি।
এছাড়ও মাল্টা বাগানের সঙ্গে মিশ্র ফলন হিসেবে লাগানো হয়েছে উন্নত জাতের আম, লেবু, কলা, পেয়ারা, পিংক কাঁঠাল, কাঠলিচুসহ আরও বেশকিছু ফল। বর্তমানে তাদের বাগান হতে উৎপাদিত হচ্ছে মাল্টা, আম, কলা, পেয়ারা ও লেবু। ফেসবুকে এই বাগানের ছবি দেখে ঘুরতে এসেছে দর্শনার্থীরা। নিজের হাতে গাছ থেকে ছিঁড়ে মাল্টার স্বাদ নিচ্ছে দর্শনার্থীরা। যাওয়ার সময় হাতে করে বাগান থেকে ছিঁড়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছে সুস্বাদু এই ফল। দর্শনার্থীরা বলছে, বাজারের ফলে ফরমালিন থাকে, কিন্তু এই বাগানে যে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে সেগুলো শতভাগ নিরাপদ। দামেও হাতের নাগালে। খেতেও বাজারের মাল্টার চেয়ে এই হলুদ মাল্টার স্বাদ অনেক বেশি। এই বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক জনের। তাদের মধ্যে সবুজ দাশ মাসে ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। এই বাগানে চাকরি তার পরিবারের সচ্ছলতা ফিরেছে। সেই আরও বলেন মাল্টা কিছু কিছু গাছ থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে বাগানের ফলগুলো আরও হলুদ বা পরিপক্ক হতে আরও ২০ দিন মতো সময় লাগবে। প্রবাসী হামিদ এই বাগানের একজন উদ্যোক্তা বলে জানা গেছে। বাগানে ফল আসলে দেশে ছুটে আসেন তিনি। কিন্তু এবার কাজের ব্যবস্থায় দেশে আসার সুযোগ হয়নি। এবার বাগানের দেখাশোনা করছে তার ভাই ওমান প্রবাসী মো. ইমরান। তিনিও বাগানের ফল বিক্রি শেষ হলে, প্রবাসে ফিরবেন। এ ব্যাপারে প্রবাসী হামিদ তালুকদার বলেন, আমি ওমানে থাকি একদিন ইউটিউবে ভিডিও দেখছিলাম। হঠাৎ হলুদ মাল্টা বাগানের একটি ভিডিও সামনে চলে আসে। প্রায় ১০ মিনিটের ভিডিওটি মন দিয়ে দেখি। পরে আরও কয়েকটি ভিডিও দেখতে থাকি। সেইদিন সিদ্ধান্ত নেই আমাদের খালি জায়গা মাল্টা বাগান করার। পরে দেশে এসে আমার বাবাসহ এই বাগান করি। বাবা মো. হারুণ বলেন, দীর্ঘ প্রবাস জীবন ছেড়ে আমিও দেশে চলে আসি। ছেলে প্রবাস থেকে বাগান করার উদ্যোগ নেন। আমিও উৎসাহিত হয়ে এই বাগান করতে উদ্যোগ গ্রহণ করি। রাউজান কৃষি বিভাগের (কদলপুর দায়িত্ব) উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আহমদ শাহ বলেন, রাউজানে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হারে সবুজ মাল্টা চাষ হয়েছে। কিন্তু সারা রাউজানে এই প্রথম বাণিজ্যকভাবে ভিয়েতনামি হলুদ রঙের মাল্টার চাষ হয়েছে আমার কদলপুর ইউনিয়নে। এই মাল্টার স্বাদ অনেক মিষ্টি জাতের। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, মাল্টা একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফলন। উৎপাদন বাড়ানো গেলে, আমদানি ততই কমে আসবেই এবং দেশের মানুষ ফরমালিন মুক্ত ফল খেতে পারবেন।
