লালদিয়ার চরে বিনিয়োগ করবে ডেনমার্ক

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চট্টগ্রাম ব্যুরো

পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে ৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ার্সক শিপিং লাইন। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ শিপিং কম্পানি। এর আগে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করে। প্রায় ৩৯.১০ একর জায়গার ওপর একটি অত্যাধুনিক কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করবে এপি মোলার মায়ার্সক শিপিং লাইন।

বর্তমানে ‘সি’ ব্লক হিসেবে চিহ্নিত প্রায় ৩২ একর জায়গা মায়ার্সককে বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া ইনকনট্রেন্ড ডিপোর পেছনের অংশে নদীর ধারে অতিরিক্ত ৭.১০ একর জমিও এ প্রকল্পের জন্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯.১০ একর। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান চারটি টার্মিনাল বছরে ৩২ লাখেরও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে এবং প্রতিবছর এই সংখ্যা তিন থেকে চার লাখ করে বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ জানান, প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে এবং চলতি বছরই উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে।

এই টার্মিনালের লক্ষ্য হবে বছরে প্রায় ৯ লাখ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একক কনটেইনার) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা, যা দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নতুন গতি আনবে। শীর্ষ শিপিং লাইন এমএসসির হেড অব অপারেশনস আজমির হোসেন চৌধুরী এই বিনিয়োগকে স্বাগত জানান। তিনি এ বিষয়ে বলেন, মায়ার্সকের মতো প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত একটি কম্পানির আগমন দেশের শিপিং খাতকে আরো গতিশীল করবে। তবে এই প্রকল্পের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে বলে জানান তিনি। আজমির হোসেন চৌধুরী বলেন, লালদিয়া চরের টার্মিনাল নির্মাণের স্থানটিতে নদীর প্রশস্ততা কম। টার্মিনাল ও জাহাজ দাঁড়িয়ে থাকার পর চ্যানেলের প্রশস্ততা কমে যেতে পারে কি না, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া কনটেইনার রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাকইয়ার্ডের জায়গাও কম। তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। তিনি এ বিষয়ে বলেন, মায়ার্সক নিশ্চয়ই স্থানটি ভালোভাবে পরীক্ষা করে এবং সব ধরনের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে লালদিয়া টার্মিনালে কার্যক্রম শুরু করে এপিএম টার্মিনালস।

শুরুতে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা থাকলেও পরে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে ৮০০ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। এপি মোলার মায়ের্স্ক-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ও সরকার-থেকে-সরকার ভিত্তিতে বিওটি (বিল্ড-অপারেট-ট্রান্সফার) পদ্ধতিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

পতেঙ্গা উপকূলের লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ করতে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা আলোচনা এখন চুক্তি পর্যায়ে পৌঁছেছে। দুই দেশের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেশিন) কমোডর আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ জানান, ‘এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ট্রান্সজিশন অ্যাডভাইজাররা কাজ করছেন, আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছি। আশা করছি চলতি বছরেই চুক্তি স্বাক্ষরের কাজ শেষ হবে। মূলত মার্কস লাইনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এপি-মোলার পৃথিবীর ৬০টির বেশি বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনা করে আসছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির জন্য প্রথম পর্যায়ে লালদিয়ার চরের দুইটি অংশে ৩২ এবং ৭ দশমিক এক পাঁচ একর জায়গা বরাদ্দ করে রেখেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

অবশ্য অত্যাধুনিক ক্রেনের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য মার্কস লাইন এপিএম টার্মিনালের চাহিদা রয়েছে অন্তত ৫০ একর জায়গা। একইসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষও ওই এলাকায় ১৫ হাজার কনটেইনার ধারণ ক্ষমতার ২২ একর জায়গার ওপর নতুন একটি ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, প্রতিষ্ঠানটি এখানে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। বিশ্বব্যাপী যেভাবে তারা টার্মিনাল পরিচালনা করে, এখানেও একইভাবে উন্নত যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। এতে বিদ্যমান হ্যান্ডলিং ব্যবস্থার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে। বন্দরের বর্হিনোঙ্গরের আলফা অ্যাঙ্কারেজের খুব কাছেই এ টার্মিনাল হতে যাচ্ছে। এছাড়া বন্দরের জেটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে দু’টি বিপজ্জনক বাঁক এড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এমনকি নাব্য সংকটের জটিলতা না থাকায় ভিড়তে পারবে যে কোনো গভীরতার জাহাজ।