আসাদগঞ্জে দৈনিক লেনদেন হয় কোটি টাকার শুঁটকি
আসাদগঞ্জের শুঁটকি রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জ যেন এক শুঁটকি পল্লী। যেখানে রয়েছে হরেক রকম শুঁটকি মাছের বিশাল সমারোহ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গড়ে ওঠা শুঁটকি ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জ শুঁটকি পট্টি হারায়নি জৌলুস। শতাব্দী প্রাচীন এই বাজারে প্রতিদিন আনাগোনা হয় হাজারও মানুষের। চট্টগ্রামের উপকূল, সুন্দরবনের দুবলার চর, কক্সবাজার, মহেশখালী, টেকনাফ ও হাতিয়া থেকে লইট্টা, চিংড়ি, কোরাল, রূপচাঁদা, ইলিশ থেকে শুরু করে হরেক রকম শুঁটকি আসে এ আড়তে। দেশের বৃহত্তম শুঁটকি বাজার হওয়ায় এখানে বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারাও আসেন। প্রতিদিন হয় কোটি টাকার লেনদেন। এই এলাকায় চারপাশ থেকে ভেসে আসে নোনতাণ্ডতীব্র গন্ধ।
প্রথম কেউ গেলে অস্বস্তি বোধ করলেও ব্যবসায়ীদের কাছে এই শুঁটকিই জীবিকার অবলম্বন। ভোর থেকেই শুরু হয় বেচাকেনা। বাজারের প্রতিটি দোকানে ঝুলছে বড় বড় বস্তা, খোলা জায়গায় বস্তায় কিংবা টুকরিতে সাজানো শুঁটকি। তাই আসাদগঞ্জের মানেই যেন শুঁটকির এক আলাদা জগত। শুধু দেশিয় বাজার নয়, আসাদগঞ্জের শুঁটকি রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে। বছরে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আসে এই শুঁটকি বাণিজ্য থেকে। ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড থেকেও শুঁটকি আসে এই বাজারে। ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে শুঁটকি আমদানি হয়ে থাকে। ৪৫ জন আড়তদার এবং ৩০০টির মতো খুচরা দোকান নিয়ে আসাদগঞ্জের এ পট্টিতে অসংখ্য শ্রমিকের জীবিকাও যুক্ত।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা শুঁটকি নামানো, শুকানো, বস্তায় ভরা আর বহন করার কাজে ব্যস্ত থাকেন। শুঁটকি পট্টিতে আকার ও মানভেদে দামও হয়ে থাকে ভিন্ন। সবচেয়ে বেশি চাহিদা লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি ও রূপচাঁদার। লইট্যা শুঁটকির দাম ৪০০-১২০০, লাল চিংড়ি ১০০০-১৭০০ টাকা, ছুরি ২০০-২০০০, কাচকি শুঁটকি ৪০০-৫০০, মইল্যা শুঁটকি ৫০০-৬০০, ফাইস্যা শুঁটকি ৬০০-৭০০, রূপচাঁদা শুঁটকি ২০০০-৪০০০ এবং লাক্ষা ৫ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই বাজারে সবচেয়ে কম দামের শুঁটকির নাম ‘মিশাইল্যা শুঁটকি’। বি. আলম ট্রেডার্স এর সত্বাধিকারী বদিউল আলম জানান, বছরে বর্ষাকাল যাওয়ার পরই নতুন শুঁটকি আসা শুরু করে। শীতকাল ছাড়া বাকি ৯ মাস এত বেশি শুঁটকি থাকে না। চাহিদার যোগান দিতে শুঁটকির সিজনে মজুদ করে রাখা হয়। এর ফলে সারাবছরই শুঁটকি পাওয়া যায়।
