মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আবু সাঈদ ভূঁইয়া, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

৫০ শয্যা বিশিষ্ট মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা প্রদান। হাসপাতালটিতে তৃতীয় শ্রেণির মঞ্জুরিকৃত ১৯২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৪৪ জন। শূন্য পদ রয়েছে ৪৯টি। চতুর্থ শ্রেণির মঞ্জুরিকৃত ৩১টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৮ জন। ২৩ জনের পদ শূন্য রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকটের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেও নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় বিঘ্ন হচ্ছে।
এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে জুনিয়র কন্সালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কন্সালটেন্ট (চক্ষু), সহকারী সার্জন (আইএমও), সহকারী সার্জন (এএমসি), জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন, ইছাখালী ইউনিয়ন এবং মঘাদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সহকারী সার্জনের পদ। তবে চিকিৎসক এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিগত ১ বছরে চিকিৎসা নিয়েছেন অনেক রোগী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ছয়জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে প্রধান সহকারী-হিসাবরক্ষক পদে একজন, হিসাবরক্ষক পদে একজন, ক্যাশিয়ার পদে একজন, অফিস সহকারী পদে একজন, ভাণ্ডার রক্ষক পদে একজন, চিকিৎসা সহকারী (এসএসিএমও) পদে ১২ জন, ফার্মাসিস্ট ৮ জন, কমফাউন্ডার ১ জন, সহকারী নার্স ১ জন, মেডিকেল টেক (রেডিও) ১ জন, মেডিকেল টেক (ডেন্টাল) ১ জন, মেডিকেল টেক (ফিজিও) ১ জন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ১ জন, স্বাস্থ্য সহকারী ৮ জন, সিএইচসিপি ১০ জনের পদ শূন্য রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে জুনিয়র মেকানিক ১ জন, এমএলএসএস ৯ জন, ওয়ার্ডবয় ৩ জন, আয়া ২ জন, কুক ১ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ২ জন, মালী ১ জন, ঝাড়ুদার ৪ জনের পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্যারের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই ২৪ থেকে জুন ২৫ পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ২২ হাজার ৬৮০ জন, ইসিজি পরীক্ষা করেছেন ৮৬৬ জন, এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করেছেন ১৭৯ জন, আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮২ জন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি করেছেন ৬ জন, এক্সরে করিয়েছেন ৩৩২ জন, ইনডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ৯১২ জন, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেছেন ১৩ হাজার ৭০৬ জন। গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি করান হয়েছে ২৬১ জনকে আর সিজার ডেলিভারি করান হয়েছে মাত্র ১৭টি।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৩৬ জন চিকিৎসকের স্থলে কর্মরত ৩০ জন থাকলেও ১ জন চিকিৎসক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং তিনজন ঢাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২.৩০টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগী দেখার নির্দেশনা থাকলেও ডাক্তাররা কেউ আসেন সপ্তাহে ৩ দিন কেউবা ৪ দিন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে এক্সরে, ইসিজিসহ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান হলেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা। আল্ট্রসনোগ্রাফি মেশিনে রিপোর্ট ভালো না আসায় এবং পরীক্ষা করানোর জন্য নির্দিষ্ট লোক না থাকায় আলট্রা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এতে করে রোগীদের বাড়তি টাকা খরচ করে প্রাইভেট ল্যাব থেকে পরীক্ষা করে আনতে হয় প্রতিনিয়ত।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন বলেন, হাসপাতালে বহির্বিভাগেও যে সব মেডিকেল অফিসার রোগী দেখেন তারা ক্রমান্বয়ে জরুরি বিভাগেও রোগী দেখেন। এছাড়া জুনিয়র কন্সালটেন্ট পদে কর্মরত ডাক্তাররা মাঝে মধ্যে ছুটি কাটান। অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সর্বোচ্চ ডাক্তার পদায়ন আছেন এবং সেবা দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, নতুন এক্সরে মেশিনের মাধ্যমে সরকারি মূল্যে এক্সরে করান হচ্ছে। এছাড়া অত্যাধুনিক মেশিনে রক্তের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করান হচ্ছে। যা আগে ছিল না। সরকারিভাবে হাসপাতালে এক্সরে মেশিন থাকলেও রেডিওগ্রাফার পদে কোনো লোক কর্মরত না থাকায় বেসরকারিভাবে একজন লোক নিয়োগ করে বর্তমানে হাসপাতালে এক্সরে পরীক্ষা করান হচ্ছে। হাসপাতালে একটি আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও সেটাতে পরীক্ষার মান অত্যন্ত খারাপ। ভালো রিপোর্ট আসে না। আলট্রাসনোগ্রাফি করার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নির্দিষ্ট কোনো লোকবলের পদ নেই। আলট্রাসনোগ্রাফি করার জন্য ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। মন্ত্রাণালয় থেকে বলা হয়েছে আলট্রা করার অভিজ্ঞ কোনো লোক থাকলে তাকে দিয়ে মেশিন চালানর জন্য। বর্তমানে হাসপাতালে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কোনো লোক নেই। তাছাড়া বিনা বেতনে কেউ তো আলট্রাসনোগ্রাফি করবেও না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডাক্তার সংকট ও কর্মচারী সংকটের বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠান হয়েছে। এছাড়া ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রূপান্তরের জন্য গত বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
