পারাপারের ভরসা দড়িটানা নৌকা
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

রাউজান-হাটহাজারী-ফটিকছড়ি তিন উপজেলার সীমানা রাউজান উপজেলার নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের ফতেনগর গ্রামের সঙ্গে। এ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। নদীর পশ্চিম হাটহাজারী উপজেলার ইউনিয়ন নাঙ্গলমোড়া, পূর্বপার্শ্বে রাউজানের ফতেহনগর ও পাশাপাশি উপজেলা ফটিকছড়ির জাহানপুর ইউনিয়ন। পূর্বপার্শ্বে থাকা দুটি উপজেলার মানুষের শিক্ষা, সাংস্কৃতি, জীবনধারণের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা কারণে যোগাযোগ হাটহাজারীর নাঙ্গলমোড়ার সঙ্গে। সেই কারণে নদীর পূর্বপাড়ের জনসাধারণ পশ্চিম পাড়ে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম এখন ফতেহনগরের খেয়াঘাটের দড়িটানা নৌকা। বছরে ৭-৮মাস বাঁশের সাঁকো থাকলেও বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে ভেসা যায় এ সাঁকো।
এই ঘাটটি বার্ষিক ইজারা দেয় স্থানীয় নোয়াজিশপুর ইউনিয়ন পরিষদ। ইজারাদার এখানে নদীর ওপর গাছ, বাঁশের উপকরণে তৈরি করেন সাঁকো। এই সাঁকোতে পারাপারে নেন জনপ্রতি ১০ টাকা। সাঁকোর ওপর চলে অটোরিকশা, মোটরসাইকেলও। এসব গাড়ি থেকে টোল নেন ২০ টাকা হারে।
হালদা নদীর উৎপত্তিস্থল পাহাড়ি অঞ্চল থেকে প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে নেমে আসা পানির স্রোতের তীব্রতায় ইজারাদারের সাঁকোটি ধসে নিয়ে যায়। বর্ষা চলে গেলে আবারও নতুন করে নির্মাণ করে দেন বাঁশ কাঠের সেতু। এই বর্ষায় ব্যতিক্রম হয়নি। পাহাড়ি পানির চাপে ভেসে গেছে সাঁকোটি। এখন খেয়াঘাট পারাপারে রাখা হয়েছে নৌকা। এপার ওপার লম্বা দড়ি টেনে রেখে ওই দড়ি টানাটানির মাধ্যদিয়ে মানুষ পারাপার করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়- ফতেহনগরের খেয়াঘাটে নতুন করে নদী পাড়ে সাঁকো তৈরির ব্যস্ততা। কথা হয় ঘাটের পাশে বসে বাঁশ কাঠ নিয়ে ব্যস্ত কয়েকজনের সঙ্গে। নদীর পাড়ে অন্যান্যদের সঙ্গে বসে ষাটোর্ধ্ব বয়সী ফটিকছড়ির বাসিন্দার আবদুস শুক্কুর কাজ করছিলেন সাঁকোর জন্য বাঁশের পাটাতন তৈরির। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় নদীর পশ্চিম পাড় হাটহাজারীর দিকে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও রাউজান ও ফটিকছড়ির (হালদা পাড়ের) দুটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই করুণ। উন্নত রাস্তাঘাটের সঙ্গে অনেকটা যোগাযোগ বিছিন্ন গ্রামগুলোর মানুষের জীবন জীবিকাসহ নানামুখি যাতায়াতে বহু বছরের মাধ্যম হালদা নদীর এই খেয়াঘাট। গ্রামগুলোর অধিকাংশ ছেলে মেয়ের লেখাপাড়া ও পাড়ের স্কুল মাদরাসায়। হাটবাজারসহ নানাবিধ প্রয়োজনে এ গ্রামের খেয়াঘাট পেরিয়ে যেতে হয়।
সাঁকোর কাজে ব্যস্ত থাকা ফতেহনগরের অন্য একজন মোহাম্মদ মুছা বলেছেন ঘাটের সাঁকোটি নির্মাণ সাত-আট মাসের জন্য। বর্ষাকালে পানির স্রোতে সাঁকো ভেসে গেলে মানুষের পারাপারে ভরসা এই দড়িটানা নৌকা।
জানা যায় বহু বছর ধরে এই ঘাটে মানুষ পারাপারে আছেন ইজারাদার রুহুল আমিন মাঝি। ঘাটের কাজের তদারকিতে থাকা মাঝির ছেলে নুরুল আজম বলেছেন এবার এই ঘাটের ইজারা মূল্য বার্ষিক ৪০ হাজার টাকা। সাঁকো নির্মাণে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হবে দাবি করে তিনি জানান নিজেদের বিনিয়োগের পাশাপাশি তিন উপজেলার কয়েকজন দানশীল ব্যক্তিও সাঁকো নির্মাণে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন।
ঘাটের মাঝি মোহাম্মদ লিটনের কাছে জানা যায় এই পথে দৈনিক হাজারখানেক মানুষ যাওয়া আসা করে। তার মতে উভয় পাড়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এই দুর্যোগপূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থার প্রতি কোনো নজর দেয়নি। তিন উপজেলার সংযোগ হওয়ায় প্রশাসনের ব্যক্তিরা শুধুমাত্র ঘাটের ইজারা দিয়েই শেষ করেন। রাউজানের নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপি নেতা নুরুল হুদা বলেন, বিগত ১৭ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা উন্নয়নের নামে লুঠপাট করেছে, চাইলে এই বিছিন্ন গ্রামগুলোর সঙ্গে মূল সড়কগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারত। কিন্তু তারা সেটি করেনি। তিনি বলেন- আগামীতে এই উন্নয়নবঞ্চিত গ্রামসমূহের রাস্তাঘাটের উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। ফতেহনগরসহ ওই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের অবসান হবে।
