চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পে গতি ফিরছে

* ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়াসা চট্টগ্রামে গত ৬১ বছরেও পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয় স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে তুলতে পারেনি। চট্টগ্রামকে হেলদি সিটিতে পরিণত করতে হলে স্যুয়ারেজ সিস্টেমের উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

বিগত কয়েক বছর ধরে চলমান চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজে গতি আনার চেষ্টা হচ্ছে। বর্ষা দীর্ঘায়িত হওয়ায় এসব প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হয়েছিল। প্রকল্প শেষ করার উদ্দেশে মাঠে নেমেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এরইমধ্যে প্রকল্পটির ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলে বন্দর নগরী আধুনিক নগরায়ণ এবং হেলদি সিটির পথে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্পর্শ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৮০ লাখ মানুষের আবাসস্থল এবং মেগা সিটির কাছাকাছি যাওয়া চট্টগ্রামে পরিকল্পিত কোনো স্যুয়ারেজ সিস্টেম নেই। মানুষের বাসাবাড়িতে সেপটিক ট্যাংকে ময়লা জমা হয়।

এছাড়া প্রতিদিন নগরীতে প্রায় ২৮৮ মিলিয়ন লিটার বর্জ্য পানি নিঃসৃত হয়ে নদীতে পড়ছে। এক সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াসার কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০৩০ সালে এর পরিমাণ প্রতিদিন ৫১৫ মিলিয়ন লিটারে গিয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৫৩৯ ঘনমিটার ফিক্যাল স্লাজ সেপটিক ট্যাংকে জমা হচ্ছে, যা আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ৭১৫ ঘনমিটারে উন্নীত হবে। ওয়াশরুমের বর্জ্য পানি নগরীর নালা হয়ে নদীতে পড়ছে। নালার ভিতর দিয়ে যাওয়া ওয়াসার পাইপ লাইনেও এসব পানি ঢুকছে। শহরের পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে, যা সার্বিকভাবে চট্টগ্রামের পরিবেশ দূষণ করছে মন্তব্য করে সূত্রগুলো বলেছে, ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।

পরিকল্পিত কোনো স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে না ওঠায় বছরের পর বছর ধরে টয়লেটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম মহানগরী শূন্যের কোটায় রয়েছে। যা ঘুরে ফিরে উন্মুক্ত মলমূত্র ত্যাগের মতো অবস্থা সৃষ্টি করছে। বলা বাহুল্য, রাজধানী ঢাকায় ১৯২৩ সালে স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে কিছু হয়নি। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়াসা চট্টগ্রামে গত ৬১ বছরেও পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয় স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে তুলতে পারেনি। চট্টগ্রামকে হেলদি সিটিতে পরিণত করতে হলে স্যুয়ারেজ সিস্টেমের উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি অনুধাবন করে পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ছয়টি স্যুয়ারেজ এবং দুটি ফিক্যাল স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করার প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা।

ছয়টি জোনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ক্যাচমেন্ট-১ এর কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম জানান, প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্যে এই কার্যক্রম চলছে। এই কার্যক্রমে কোতোয়ালী, বাটালি হিল, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, পাঠানটুলী, চৌমুহনী, ঈদগাহ ও হালিশহরসহ নগরীর বিপুল সংখ্যক মানুষ সুফল পাবে। এতে নগরীর ২১টি ওয়ার্ডের ২৮ হাজার বাড়িঘরে স্যুয়ারেজের লাইন যুক্ত করা হচ্ছে। ২০০ কিলোমিটারের বেশি পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে মাটির ৫-১৫ মিটার পর্যন্ত গভীরে। নির্মাণ করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় ম্যানহোলসহ আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো। এরমধ্যে একটি অংশে হালিশহরের চৌচালায় ১৬৩ একর ভূমিতে দুটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা হচ্ছে। যার একটিতে পাইপলাইনের মাধ্যমে আনা বর্জ্য প্রতিদিন নয় কোটি লিটার পরিশোধন করে পরিবেশসম্মতভাবে সাগরে ফেলে দেওয়া হবে। অন্য প্ল্যান্টটি ফিক্যাল স্লাজের (বিশেষ ধরনের গাড়িতে বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য) মাধ্যমে সংগৃহীত দৈনিক ৩০০ টন বর্জ্য পরিশোধন করা যাবে। এই প্রকল্পের আওতায় এরইমধ্যে ১৩৫ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

পাশাপাশি হালিশহর আনন্দবাজার এলাকায় নির্মিত হচ্ছে আধুনিক স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি)। যার অবকাঠামোগত কাজ ৮৫ শতাংশ এবং যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ ৪০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চলতি বছরে বর্ষা দীর্ঘায়িত হওয়ায় আমরা কিছু সময় কাজ বন্ধ রেখেছি। সময়মত কাজ করতে পারিনি। রাস্তা কাটার ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনেরও আপত্তি ছিল। কিছু এলাকায় রাস্তা সরু ও জনবহুল হওয়ায় কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে করে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। বর্ষা বন্ধ হলেই আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করব। এতে গতি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আমাদের লক্ষ্য আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের মূল কাঠামো সম্পন্ন করা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীতে আলাদা করে আর কোনো সেপটিক ট্যাংক বা পয়ঃনিষ্কাশন চেম্বার থাকবে না। প্রতিটি বাড়ির টয়লেট, রান্নাঘর ও গোসলখানার বর্জ্য পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে যাবে। সেখানে বর্জ্য পরিশোধনের পর বিশুদ্ধ পানি বঙ্গোপসাগরে নিঃসরণ করা হবে এবং কঠিন বর্জ্য পরিবেশবান্ধব উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা হবে।