অর্থাভাবে থমকে গেছে পিউ দাশের শিক্ষাজীবন
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
খোকন সুশীল, (লোহাগাড়া) চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর কলাউজানের তহশিলদার পাড়াস্থ রঞ্জিত দাশ ও কৃষ্ণা দাশের মেয়ে পিউ দাশ জন্মগতভাবে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে ১৯৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। দৈহিকভাবে একেবারে খাটো এবং স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে না পিউ দাশ।
অন্যের সাহায্যে বা লাঠিতে ভর করে একটু একটু হাঁটতে পারে। শৈশবকাল থেকে মা-বাবার স্নেহ-মায়ায় লালিত হয় পিউ। জ্ঞান-বুদ্ধির প্রসার ঘটলে শিক্ষাজ্ঞান অর্জনে তার আগ্রহ জন্মে। লেখাপড়ার প্রতি প্রতিবন্ধী সন্তানের আগ্রহ দেখে মা তাকে পারিবারিক শিক্ষাদানের সঙ্গে বর্ণজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিতি হওয়ার যোগ্যতা সৃষ্টি করেন। মায়ের আশ্রয়ে পুরোপুরি বর্ণজ্ঞান লাভ করলে তাকে বাড়ির সামান্য ব্যবধানে অবস্থিত পূর্ব সুখছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিদিন মা কোলে করে তাকে স্কুলে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে দিতেন এবং স্কুল ছুটির পর পুনরায় মা গিয়ে তাকে কোলে করে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। প্রতিবন্ধী পিউ দাশের লেখাপড়ার আগ্রহ দেখে শিক্ষকেরাও তার প্রতি সুনজর রাখতেন।
সম্প্রতি এলাকা পরির্দশনকালে পিউ দাশের মা কৃষ্ণা দাশের সহিত দেখা হয়। সাক্ষাতে আলাপচারিতায় তিনি তার প্রতিবন্ধী মেয়ে সম্পর্কে এ কথাগুলো বলেন। তিনি আরও বলেন, শৈশবকালে তার প্রতিবন্ধী মেয়ে পিউ দাশ ছিল একটি পুতুল সমতুল্য। সংসারের আর্থিক দুঃখ-দৈন্যতার পরও তিনি পিউ দাশকে মানুষ করতে হাল ছাড়েননি।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বাড়ির অদূরে অবস্থিত সুখছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। কোলে-পিঠে করে আনা-নেওয়ার মাধ্যমে তার মেয়ের স্কুল জীবনের লেখাপড়া চলতে থাকে। শিক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতায় তার মেয়ে ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৩.১১ পেয়ে কৃতকার্য হয়। এতে দুঃখিনী মার আশা ও প্রেরণায় আগের চাইতে গতিবেগ সৃষ্টি হয়। কলেজের ভর্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে সাতকানিয়া উপজেলাধীন এমএ মোতালেব কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করে।
মা তাকে আগের মতো কোলে-পিঠে করে কলেজে নিয়ে গিয়ে টেবিলে বসিয়ে দিতেন। কলেজ ছুটি হলে মা তাকে একইভাবে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। শিক্ষা জীবনের অগ্রযাত্রায় পিউ দাশ ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য নির্বাচনি পরীক্ষা দিতে থাকে। চার বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পর ৫ম বিষয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ায় সময় লোহাগাড়া উপজেলাধীন বার আউলিয়া মাজার সংলগ্ন আরকান সড়কে এক সড়ক দুর্ঘটনায় পিউ দাশ গুরুতর আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে। ফলে সে পরবর্তী নির্বাচনি পরীক্ষাসমূহে অংশগ্রহণ করতে না পারায় ফাইনাল পরীক্ষার ফরমপূরণ করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে মা বলেন, সর্বনাশা সড়ক দুর্ঘটনায় তার মেয়ের কলেজ জীবনের রঙিন স্বপ্ন কেড়ে নিলে পিউ দাশ শিক্ষা জীবন থেকে ছিটকে পড়ে। তিনি আরও বলেন, তার প্রতিবন্ধী মেয়ে পিউ দাশ বর্তমানে শুধু পরিবারের স্মৃতি। শত আর্থিক দুঃখ-দৈন্যতার মধ্যেও তার প্রতিবন্ধী মেয়ের প্রতি তাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ঘটেনি। যতটুকু সম্ভব অন্তরের কোমল স্নেহ ও মায়া-মমতা দিয়ে আমরা মা-বাবা ও স্বজনেরা সবাই তাকে বুকে জড়িয়ে রেখেই লালন-পালন করে যাচ্ছি। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবন্ধী ভাতায় সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহে কিছুটা সুযোগ পায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
