ফ্রিল্যান্সিংয়ে তরুণদের পথপ্রদর্শক খাগড়াছড়ির খলিল
উচ্চ শিক্ষিত খলিল চান তরুণরা চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক। অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নুরুচ্ছাফা মানিক, খাগড়াছড়ি

তথ্য প্রযুক্তির অবারিত সুযোগ কাজে লাগে দেশের অনেক স্বপ্নবাজ তরুণ দেশ ও নিজের ভাগ্য বদল করছেন। তাদের একজন পার্বত্য জনপদ খাগড়াছড়ির ইব্রাহিম খলিল। আইটি খাতের পরিচিত ও বন্ধুসুলভ এক নাম এটি। তবে শুরুর গল্পটা এত সহজ ছিল না। পাহাড়ে বিদ্যুৎ, প্রযুক্তি ও সুযোগের অভাব থাকলেও তার আগ্রহ ও অধ্যাবসায় তাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক যাত্রায়। ২০১৬ সালের দিকে মায়ের গয়না বিক্রি করে কেনা কম্পিউটার দিয়ে শুরু। সে কম্পিউটার দিয়ে প্রশিক্ষণ নেন ফ্রিল্যান্সিং। অনলাইন ও অফলাইন যেখানে সুযোগ হতো শিখে নিতেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের খুঁটিনাটি। এভাবে দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম, অনুশীলন ও চেষ্টা একদিন ধরা দেয় তার হাতে। ২০১৮ সালে ফাইভারে ৫০ ডলারের একটি কাজ পান। কাজটি ভালোভাবে শেষ করায় সেই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে আরও কাজ পান ইব্রাহিম, সঙ্গে ফাইভ স্টার রিভিউ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
ইব্রাহিম খলিল মূলত গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট।
আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, রোমানিয়া, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ইতালি, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করেছেন তিনি। ইব্রাহিম ফ্রিল্যান্সিংকে নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন। সে লক্ষ্যে খলিল আইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় শুরু হলেও এখন তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মাটিরাঙার পাশাপাশি খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকায় দুটি প্রতিষ্ঠান হয়েছে। খলিল আইটি ছাড়াও এজেন্সির মাধ্যমেও কাজ করছেন। মূলত খলিল আইটি এজেন্সি বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাজ করে। আর খলিল আইটি নামের প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে ট্রেনিং দেয়।
এ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ হাজারের বেশি মানুষ গ্রাফিক ডিজাইন উইদ ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানে কোর্স করে অনেকে এখন স্বাবলম্বী। নতুনদের নিয়েই ইব্রাহিমের বেশির ভাগ কাজ। তিনি নতুনদের মধ্যে যে ভুলগুলো দেখতে পান, সেগুলো হলো ধৈর্য না থাকা, চ্যালেঞ্জ না নেওয়ার মানসিকতা, প্রশিক্ষণ শুরু করলে তা সঠিকভাবে শেষ না করা, কাজ না পেলে হতাশ হয়ে পুনরায় চেষ্টা না করা। নতুনদের জন্য ইব্রাহিমের পরামর্শ হলো, কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার আয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
প্রথমে যেকোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তারপর যোগাযোগের বিষয়টি শিখে ক্লায়েন্ট খুঁজতে হবে। ইব্রাহিম খাগড়াছড়ি জেলার শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ইয়ুথ ক্যারিয়ার কার্নিভ্যালে রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেন তিনি। বর্তমানে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন খলিল। তার প্রতিষ্ঠান ও নিজের আয়ের ৫ শতাংশ অর্থ প্রতি মাসে গরিব অসহায় মানুষের একবেলা ভালো খাবারের জন্য ব্যয় করেন। মানুষের সেবায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আন-নাফি ফাউন্ডেশন। এ ছাড়া শীতের সময় প্রত্যন্ত এলাকায় কম্বল বিতরণ করেন তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। উচ্চ শিক্ষিত খলিল চান তরুণেরা চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক। অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক।
