সত্য সাহার পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণের দাবি

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সুমন পল্লব, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নন্দীরহাট- পুকুরঘাট, মন্দির ও শিল্পসাহিত্যের স্মৃতি ধারণ করা এক ঐতিহ্যবাহী জনপদ। ব্রিটিশ শাসনামলের অবদান হিসেবে এখানেই গড়ে উঠেছিল শ্রী লক্ষ্মীচরণ সাহার জমিদারবাড়ি। প্রায় দেড় শতাব্দী আগে নির্মিত এই স্থাপনা শুধু স্থাপত্য ঐতিহ্য নয়, এটি একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক সত্য সাহার শৈশবের স্মৃতিধারকও। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জমিদার লক্ষ্মীচরণ সাহার ব্যবসায়িক প্রভাব ছিল হাটহাজারী-রাউজান অঞ্চলে বিশেষভাবে বিস্তৃত। তার সময়ে নির্মিত এই বাড়িতে ছিল শাহী পুকুরঘাট, খিলানযুক্ত দালান, কারুকাজ করা দরজাজানালা ও দোতলা বিশিষ্ট বাসভবন। জমিদার বাড়ির সংলগ্নেই এখনো টিকে আছে দেবী মন্দির ও পূজামণ্ডপ, যেখানে নিয়মিত চলে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রজগতে অনন্য সুরের মায়াজাল ছড়িয়ে যাওয়া সত্য সাহা এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন। তার হাতেই সৃষ্টি হয় যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, চঞ্চল মন, ওরে নীল দরিয়া, একবার যদি কেউ ভালোবাসতোসহ বহু কালজয়ী গান। স্থানীয়দের ভাষায়, এই বাড়ি শুধু ইট-পাথর নয় এখানে রয়েছে বাংলা গানের ইতিহাস।

কালের বিবর্তনে জমিদারবাড়িটি আজ জরাজীর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আর সংস্কার করা হয়নি। চুনসুরকি উঠে যাওয়া প্রাচীন দেয়াল, ভাঙা ছাদ ও গাছগাছালিতে ঢেকে যাওয়া স্থাপত্য এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাজারো মানুষ দেখতে আসে, কিন্তু সংরক্ষণের কাজ কেউ করে না। সরকারের নজর দিলে এটি বড় পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নিতে পারত। মালিকানা সংকট, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব ঘোষণায় দেরি এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে এ ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। হাটহাজারীর মানুষ মনে করেন, জমিদারবাড়িটিকে সংরক্ষণ করলে সত্য সাহার স্মৃতিকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে বিকশিত হতে পারে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যনির্ভর পর্যটন। প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের উদ্যোগে পুনর্নির্মাণ বা জাদুঘর গড়ে তোলার দাবি বহুদিনের। নন্দীরহাটবাসী বলেন, এটি শুধু স্মৃতি নয়, আমাদের গর্ব। আর দেরি হলে হয়তো আর কিছুই থাকবে না ধরে রাখার। সত্য সাহার সুরের শিকড়, নন্দীরহাটের শতবর্ষী ঐতিহ্য সংরক্ষণে আজই প্রয়োজন কার্যকর সরকারি উদ্যোগ। নইলে সময়ের স্রোতে মিলিয়ে যাবে ইতিহাসের এই মূল্যবান সাক্ষী।