রাউজানে কমেছে কলা আবাদ
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কামরুল ইসলাম বাবু, রাউজান (চট্টগ্রাম)

বাংলাদেশে অতি পরিচিত একটি প্রিয় ফল কলা। পুষ্টিগুণে ভরা কলার প্রচুর চাহিদা থাকলেও কলা উৎপাদনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় দিন দিন কমে যাচ্ছে এই ফলের চাষাবাদ। কৃষিবিদদের মতে বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু কলা চাষের জন্য আদর্শ। সারাবছর এর চাহিদা থাকে। প্রায় সব ধরনের উর্বর মাটিতে কলা চাষ করা যায়। বিশেষ করে বেলে-দোঁআশ বা মাটিতে কলার ভালো ফলন হয়। সারা দেশের মত চট্টগ্রামের রাউজানের গ্রামীণ জনপদ থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে দেশিয় কলার চাষাবাদ। বছর দশেক আগেও প্রতিটি গ্রামে কলার বাগান দেখা গেলেও এখন তেমনটি দেখা যায় না।
গ্রামের প্রবীণ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় আগে প্রতিটি গ্রামে ছিল কাঁঠালি কলা (বাংলা কলা), আনাজি কলা, আইট্যা কলার (বিচি কলা) বাগান। এখন দেশিয় জাতে এসব কলার উৎপাদন একেবারে কমে গেছে। এখন মানুষের আগ্রহ হাইব্রিড জাতের নানা জাতের কলা চাষের দিকে। তারা বলেন দেশির জাতের কলার প্রচুর চাহিদা ও তুলনামূলক ভাবে দাম বেশি পাওয়া গেলেও কৃষি বিভাগ থেকে দেশি কলা চাষাবাদের কোনো ধরণের সহায়তা পাওয়া যায় না।
সরকারি এই বিভাগ থেকে নতুন নতুন জাতের হাইব্রিড ফল, ফুলের বীজ দিয়ে এখন উৎসাহিত করছে। দেশিয় কলার চাষাদের হতাশাব্যঞ্জক এমন পেক্ষপটে এক আশাব্যঞ্জক কলা চাষের দৃশ্য দেখা গেছে রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের সরকার পাড়া গ্রামে। এই গ্রামের নিজের অনাবাদি ছয় শতক জমিতে দেশিয় কলার বাগান সৃষ্টি করে এখন বাগান থেকে পরিপক্ষ কলা কাটতে শুরু করেছেন সৌখিন কৃষক টুটুন মহাজন। শখের বসে বাগান সৃষ্টিকারী টুটুন মহাজনের সাথে কথা বললে তিনি বাগান সৃষ্টি পেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন দেশে দেশিয় কলার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাজারে প্রতিপিচ কলার দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা। তাও চাহিদা মত দেশিয় (কাঁঠলী কলা) পাওয়া যায় না বাজারে।
হাইব্রিড জাতের কলা পাওয়া গেলেও এসব কলার চাহিদা দাম দুটাই কম। এই বাগানী জানায় নয় মাস আগে সৃষ্ট এই বাগানে গত দুই মাস থেকে ফলন আসতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বাগান থেকে আট দশটি কলার ছড়া কেটেছেন। প্রতিটি ছড়া বিক্রি করছেন এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির স্বীকার করেন দেশি জাতের কলার পুষ্টিগুণ , প্রচুর চাহিদার কথা। তবে এই কর্মকর্তা জানান কলা চাষাবাদে তার দপ্তর থেকে সরকারিভাবে কৃষকদের সহায়তা দিতে না পারলেও কলার বাগান সৃষ্টিতে নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়ে আসছেন।
কিছু কিছু কৃষক দেশি কলার বাগানের পাশাপাশি অমৃত সাগর জাতের কলার বাগান করে লাভবান হচ্ছে। এই কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে রাউজানে ৩৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে।
বড় পরিসরে বাগান আছে আটটি। কৃষিবিদরে মতে স্বল্প খরচে কম পরিশ্রমে কলা উৎপাদন করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু দেশে প্তানির করার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত ফলদানকারী কলা চাষে চারা রোপণের ৯-১২ মাসের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এক হেক্টর জমিতে চারা লাগানো হলে ২৫-৩০ টন কলা উৎপাদন সম্ভব। যা অন্যান্য ফসলের উৎপাদন আয় ব্যয়ের হিসাবে কলা চাষ অনেক বেশি লাভজনক।
