ঢাকা শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মহানবী (সা.) এর বহুবিবাহ কাফেরদের ভ্রান্তিবিলাস

ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
মহানবী (সা.) এর বহুবিবাহ কাফেরদের ভ্রান্তিবিলাস

পশ্চিমা বিশ্বের যেসব জ্ঞানীগুণী ইসলাম, মহানবী (সা.), আরবি ও ফারসি ভাষা নিয়ে গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেন তাদের বলা হয় প্রাচ্যবিদ। প্রাচ্যবিদরা প্রধানত ইসলামের দোষত্রুটি আবিষ্কারের পেছনেই তাদের মেধা ও প্রতিভা উজাড় করেন। তারা মহানবী (সা.)-এর জীবনের যে দিকটি নিয়ে সমালোচনা করে আনন্দ পান, তা হলো নবীজির বহুবিবাহ ও পরিণত বয়সে একজন বালিকাকে বিয়ে করা। এ কথা সত্য যে, মহানবী (সা.)-এর সহধর্মিণীর সংখ্যা ছিল ১১ জন এবং হজরত আয়েশা (রা.) খুব অল্প বয়সে তার বিবাহবন্ধনে এসেছিলেন।

এ সম্পর্কিত আলোচনায় প্রথমে দেখতে হবে, বিবাহ একটি সামাজিক বন্ধন; কাজেই প্রত্যেক সমাজে বিবাহকে কোন চোখে দেখা হয়, তা বিবেচনায় রাখতে হবে। পশ্চিমা দুনিয়ায় একজন নারী বহু পুরুষের সঙ্গে লিভ-টুগেদার করলে দোষ ধরা হয় না। এমনকি মানব সভ্যতার চরম অবমাননা ঘটিয়ে সমকামিতার মতো অভিশপ্ত যৌনাচারকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে বহু রাষ্ট্রে। তারাই আবার একের অধিক বিবাহকে অবৈধ ও গর্হিত বলে নিন্দা করে। পক্ষান্তরে আরবের সমাজে এখনও বহু বিবাহ দোষণীয় কিছু নয়। বিশেষত ইসলামের আবির্ভাবকালে মেয়েরা এতই নিগৃহীত ছিল যে, মেয়ে শিশু জন্ম নিলে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলা হত। যুদ্ধবিধ্বস্ত আরব সমাজে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকরা চরম উৎকণ্ঠায় থাকত এবং তারা পরিবারের জন্য অর্থনৈতিক বোঝা বলে গণ্য হত।

দ্বিতীয় বিষয় হলো, কোনো মানুষ যদি কামুক বা অবাধ যৌনাচারী হয়, তাহলে তার প্রকাশ কখন ঘটে? নিশ্চয়ই যৌবনকালে, কিংবা বিশ, পঁচিশ বা চল্লিশ বছর বয়সে। ৪০-এর পর যে কারও যৌবন জোয়ারে ভাটার টান লাগে। এটিই মানব স্বভাবের কথা। এই বাস্তবতাটি সামনে রেখে আমরা দেখব একশ্রেণির প্রাচ্যবিদ মহানবী (সা.)-এর দাম্পত্য জীবন নিয়ে যে কথা বলতে চান, তা আদৌ সত্য কিনা।

১. নবীজি যখন ২৫ বছরের টগবগে তরুণ, তখন বিবাহ করেন আরবের ধনবতী বিদ্যুষী রমণী খাদিজাকে (রা.)। খাদিজার উদ্যোগ ও পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় এ বিয়ে যখন সম্পন্ন হয়, তখন হজরত খাদিজার বয়স ছিল ৪০ বছর এবং বিধবা। তার প্রথম স্বামীর ঘরে দু’টি এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে একটি সন্তান ছিল। বিদ্বেষী প্রাচ্যবিদদের আমরা প্রশ্ন করব, আপনারা নবী চরিত্র নিয়ে নিজের কলুষিত মনের আয়নায় যা কল্পনা করেন তা সত্য হলে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ পরিবারের সন্তান, হাশেমী বংশের নেতা আবু তালিবের ভাতিজা ২৫ বছরের যুবক মুহাম্মদ (সা.) কি দুই স্বামীর ঘর করেছেন এমন ৪০ বছর বয়সি মহিলাকে বিয়ে করতেন। কুরাইশ নেতারা বারবার প্রস্তাব দিয়েছিল, যদি চাও আরবের সবচেয়ে সুন্দরী নারী তোমাকে দেব; তবুও বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে নতুন ধর্মের প্রচার থেকে বিরত হও। তিনি কি সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেননি? নব্যুয়াতের দশম সালে হজরত খাদিজা (রা.) ইন্তেকাল করেন। তখন নবীজির বয়স হয়েছিল ৫০ বছর আর খাদিজার বয়স ছিল ৬৫ বছর। এই দীর্ঘ ২৫ বছর পর্যন্ত তিনি খাদিজা ছাড়া অন্য কোনো মহিলাকে শাদী করেননি। তার সঙ্গে পরম শান্তির দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে কাসেম ও আব্দুল্লাহ এবং চার মেয়ে যায়নাব, রোকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতেমা জন্মগ্রহণ করেন। নবী নিন্দুকদের বলব, আপনারা নবী চরিত্রের এ অধ্যায়টির ব্যাখ্যা কী দেবেন?

স্মরণ রাখা প্রয়োজন, কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী নবীজির সব সহধর্মিণী প্রত্যেক মুসলমানের মা। মা খাদিজার ইন্তেকালের পর নবীজির সংসারে যখন অচলাবস্থা তখন ঘনিষ্টজনরা প্রস্তাব করলেন হাবশায় হিযরত থেকে ফিরে আসা বিধবা সাওদা বিনতে যাম‘আ (রা,)-কে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করুন। স্বামী সুকরান ইবনে আমর মক্কায় পৌঁছে মারা গেলে ধর্মপ্রাণ সাওদা আপন কাফের ও মুশরিক গোত্রের কাছে নিগৃহীত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। বিবাহের সময় নবীজি (সা.) ও হজরত সাওদা (রা.) উভয়ের বয়স ছিল ৫০ বছর। হজরত সাওদা ইন্তেকাল করেন ৬৩ বছর বয়সে ১৯ হিজরীতে। নবীজির সঙ্গে তার সংসার জীবনের মেয়াদ ছিল ১৪ বছর। আপনাদের কলুষিত চিন্তার বিন্দুমাত্র সত্যতা থাকলে বলুন, তিনি কি তখন কোনো উদ্ভিন্ন যৌবনা নারীকে বিয়ে করতে পারতেন না?

নবীজি (সা.)-এর ওপর অহি নাজিলের সূচনা হয়েছিল ৪০ বছর বয়সে। এরপর থেকে ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) আল্লাহর প্রত্যাদেশ নিয়ে নিয়মিত আগমন করতেন নবীজির কাছে। জিবরাঈল একবার স্বপ্নযোগে কাপড়ে মোড়ানো একটি ছবি দেখিয়ে বলেন, ইনি আপনার স্ত্রী। ছবিটি ছিল কুরাইশ বংশের সম্ভ্রান্ত পুরুষ নবীজিকে আল্লাহর নবী বলে সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপনের সৌভাগ্য ও গৌরবের অধিকারী হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)-এর মেয়ে। তার বয়স হয়েছিল ছয় বছর। এই মা তো স্বামীর সংসার করার উপযুক্ত নন। আর একে বিবাহ না বলে বাগদত্তা বলাই উচিত। কারণ, হিজরতের তিন বছর আগে বিবাহ হলেও তিনি স্বামীর সংসারে আসেন হিজরতের পর। মিথ্যাবাদীদের অনুমানের কিঞ্চিৎ সত্যতা থাকলে তিনি কি এমন ছোট্ট বালিকাকে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করতেন, যাকে ঘরে তুলতে তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। নব্যুয়তের ১৩ বছরে অর্থাৎ হজরত (সা.)-এর বয়স যখন ৫৩ বছর, তখন তিনি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেন। সেই ৫৩ বছর পর্যন্ত তাঁর সংসারে ছিল একজন স্ত্রী। প্রথম হিজরীতে বাবা আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর অনুরোধে আমাদের মা আয়েশা (রা)-কে সংসারে তুলে আনেন নবীজি। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল নয় বছর। নবীজির সঙ্গে তাঁর সংসার জীবনের সময়কাল ছিল ৯ বছর। তিনি ৬৩ বছর বয়সে ৫৭ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। আয়েশা (রা.) ছাড়া আরও যে মহিয়সি মায়েরা নবীজির সংসারে আসেন তারাও ছিলেন বয়স্কা ও বিধবা। তাদের বিয়ে করার পেছনে নানা ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও যুদ্ধ-বিগ্রহ এড়ানোর বিবেচনবোধ ক্রিয়াশীল ছিল।

হজরত হাফসা ছিলেন হজরত ওমর (রা.)-এর মেয়ে। বদরযুদ্ধে তার স্বামী মারা গেলে আরবের সমাজ ব্যবস্থায় মেয়ের নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হজরত ওমর (রা.) বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি সরাসরি উসমান (রা.)-কে প্রস্তাব করেন আমার মেয়েকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ কর। উসমান (রা.) অপরাগতা প্রকাশ করলে রাগ করে আবু বকর (রা.)-এর কাছে যান এবং হাফসাকে বিয়ে করার জন্য তার কাছে প্রস্তাব করেন। তিনিও নীরব থাকলেন, সদুত্তর দিলেন না। অভিমানী ওমর (রা.) নালিশ নিয়ে গেলেন নবীজির খেদমতে; কিন্তু আল্লাহর ফায়সাল ছিল অন্যরকম। নবীজি হাফসাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ওমর (রা.)-এর উৎকণ্ঠার অবসান ঘটালেন আর আরবের সম্ভ্রান্ত আদী গোত্রকে আত্মীয়তার ডোরে আবদ্ধ করলেন। তৃতীয় হিজরীতে তখন হজরত হাফসার বয়স হয়েছিল ২২ বছর এবং নবীজির বয়স ৫৫ বছর। তিনি ৫৯ বছর বয়সে ৪১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। নবীজির সঙ্গে তার দাম্পত্য জীবন ছিল ৮ বছরের। হজরত হাফসার ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়, অসহায় নিরাশ্রয় মহিলাদের আশ্রয় দান ও গোত্রীয় সম্পৃতি প্রতিষ্ঠা ছিল নবীজির বহুবিবাহের পেছনে অন্যতম কারণ ও হিকমত।

একই বছর ৩ হিজরীতে তিনি শাদী করেন আমাদের মা যায়নাব বিনতে খুযাইমাকে। আগে দু’জন স্বামীর ঘর করেছিলেন তিনি। উহুদ যুদ্ধে দ্বিতীয় স্বামী শহীদ হলে তিনি সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে যান। বদান্যতার কারণে সমাজে তাঁর খ্যাতি ছিল ‘উম্মুল মাসাকীন’ বা ‘গরিবদের মা’ হিসেবে। ৩০ বছর বয়সি খুজাইমাকে তৃতীয় হিজরীতে যখন বিবাহ করেন, তখন নবীজির বয়স ৫৫। তিনি মাত্র ৮ মাস সংসার করে ৩০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। আমাদের প্রশ্ন, এ সব বিয়ের মধ্যে সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ মহামানবের জীবনে চারিত্রিক ত্রুটি খোঁজা কি বিকৃত রুচির পরিচায়ক নয়।

উম্মুল মুমেনীন উম্মে সালামা বিনতে আবু উমাইয়া মাখযূমী। তিনি তাঁর স্বামীসহ হাবশায় হিজরত করেন। মদিনায় ফিরে আসার পর উহুদ যুদ্ধে তার স্বামী মারাত্মকভাবে জখমী হন এবং পরে শাহাদত বরণ করেন। ফলে কতক এতিম বাচ্চা নিয়ে বৃদ্ধা উম্মে সালমা সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে যান। চতুর্থ হিজরীতে নবীজি (সা.) বিধবা উম্মে সালমাকে যখন বিয়ে করেন, তখন নবীজি ও তাঁর বয়স ছিল ৫৬ বছর। তিনি ৮০ বছর বয়সে ৬০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তিনি নবীজির সংসারে ছিলেন ৭ বছর।

নবীজির ফুফাত বোন যায়নাব বিনতে জাহাশ-এর সঙ্গে বিয়ে হয় নবীজির পালকপুত্র যায়দ ইবনে হারেসার। প্রথম থেকে যায়নাব এ বিয়েতে অনাগ্রহী ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিয়ে হলেও সংসার সুখের হয়নি। যায়দ (রা) নবীজির কাছে এসে যায়নাবকে তালাক দানের অনুমতি চান। নবীজি তাদের সমঝোতার পরামর্শ দেন; কিন্তু উভয়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তখন কোরআন মাজিদের আয়াত নাজিল হয় যে, ‘যায়নাবের সঙ্গে আমি (আল্লাহ) আপনার বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।’ হজরত যায়নাব বলতেন, নবীপত্মীদের মধ্যে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল আসমানে। এই বিয়ের মাধ্যমে জাহেলি যুগে আরব সমাজে প্রচলিত একটি কুপ্রথার মূলোচ্ছেদ হয়। আরবরা আপনপুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করা যেমন হারাম, তেমনি পালকপুত্রের বউ স্বামী পরিত্যক্তা হলে তার সঙ্গে বিবাহবন্ধনকে হারাম মনে করত। পঞ্চম হিজরীতে হজরত যায়নাব বিনতে জাহশের সঙ্গে নবীজির শাদী হওয়াতে সেই কুপ্রথার মূলোৎপাটন হয়ে যায়। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৬ বছর আর নবীজির বয়স ৫৭ বছর। ২৫ হিজরীতে ৫১ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। নবীজির সংসারে ছিলেন ৬ বছর।

পঞ্চম বা ষষ্ঠ হিজরীতে নবীজির সংসারে আসেন আমাদের আরেকজন মা জুয়াইরিয়া বিনতে হারেস। তিনিও ছিলেন বিধবা এবং বয়স ছিল ৩০ আর নবীজির বয়স ৫৭ বছর। হজরতের সঙ্গে ৬ বছর ঘর করে ৫৬ হিজরীতে ৭১ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন, বনি মুস্তালিক গোত্রপতির মেয়ে। মদিনার পার্শ্ববর্তী বনি মুস্তালিক গোত্র নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাতে তারা পরাজিত এবং তাদের অনেকে বন্দি হয়। তখনকার নিয়মে বন্দিদের দাস হিসেবে বণ্টন করা হলে জুয়াইরিয়া সাবেত ইবনে কায়স আনসারীর ভাগে পড়েন। যুদ্ধে তার স্বামী নিহত হয়েছিল। তিনি আনসারীর সঙ্গে মুক্তিপণ দিয়ে দাসত্ব লাঘবের চুক্তি করেন এবং নবীজির কাছে এসে সাহায্যপ্রার্থী হন। নবীজি তাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেন। পরে জুয়াইরিয়াকে নবীজি স্ত্রীর মর্যাদা দেন। এ খবর প্রকাশ হলে মুসলমানরা যুদ্ধ বন্দি হিসেবে পাওয়া বনি মুস্তালিকের সব দাসকে মুক্ত করে দেন। তাদের মারফত সংবাদ চলে যায় বনি মুস্তালিক পাড়ায়। এ ঘটনার জেরে পুরো বনি মুস্তালিক গোত্র ইসলামের ছায়ায় অংশ নেয়। এই বিয়ে ছিল বন্দি মুক্তি ও গোত্রীয় শান্তি-সম্প্রীতির অনুঘটক। এখানে বিদ্বেষীদের কলুষিত চিন্তার খোরাক কোথায়?

হযরত উম্মে হাবিবা বিনতে আবু সুফিয়ান। তিনি মক্কার মুশরিকদের অত্যাচার থেকে রক্ষার জন্য স্বামী আব্দুল্লাহ বিন জাহাশসহ হাবশায় (ইথিওপিয়া) হিযরত করেন। স্বামী সেখানে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে মুরতাদ হয়ে গেলে তিনি ইসলামে অটল থাকেন। নবীজির প্রস্তাবক্রমে বাদশাহ নাজ্জাশী সেখানে প্রতিনিনিধি হয়ে তার সঙ্গে নবীজির বিবাহের ব্যবস্থা করেন। বর্ণনান্তরে মদিনায় ফিরে আসার পর ৬ হিজরীতে নবীজি তাকে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করেন ও আশ্রয় দেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৬ এবং নবীজির বয়স ৫৮। নবীজির সঙ্গে ৬ বছর ঘর করেন। তিনি ৭৩ বছর বয়সে ৪৪ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। প্রধান শত্রু মক্কার কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের মেয়েকে বিবাহ করার এই ঘটনা কুরাইশদের সঙ্গে দীর্ঘকালের শত্রুতা অবসানে বিরাট ভূমিকা পালন করেছিল।

৯. সপ্তম হিজরীতে নবীজির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বিধবা হজরত সাফিয়া বিনতে হুয়াই ইবনে আখতাব। তার বয়স ছিল ১৭ বছর আর নবীজির বয়স ৫৯ বছর। তিনি ৫০ বছর বয়সে ৫০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন ইহুদি বনি নজির গোত্রের সন্তান। খায়বার যুদ্ধে তিনি মুসলামনদের হাতে বন্দি হন এবং যুদ্ধে তার স্বামী নিহত হয়। নবীজি তাকে মুক্তি দিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা দেন। এর ফলে তাঁর গোত্রের সব যুদ্ধবন্দি মুক্তি লাভ করে এবং ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে দীর্ঘকালীন শত্রুতা অবসানের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। তাছাড়া বনি নজিরের বহু লোক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। এই বিবাহকেও কোনো কুমতলব নিয়ে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই।

সপ্তম হিজরীতে নবীজি আরেকজন মহিয়সিকে বিবাহ করেন। তিনি ছিলেন মায়মুনা বিনতে হারেস হেলালী। এর আগে তিনি দু’জন স্বামীর সঙ্গে সংসার করেন। তিনি ছিলেন নবীজির চাচা আব্বাস (রা)-এর স্ত্রীর বোন। সপ্তম হিজরীতে কাজা ওমরা পালনের জন্য নবীজি মক্কায় গেলে হজরত আব্বাসের প্রস্তাবক্রমে তাকে শাদী করেন। বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৬ বছর এবং নবীজির বয়স ৫৯ বছর। তিনি ৫১ হিজরীতে ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন এবং হজরতের সংসারে ছিলেন তিন বছর। ৭ম হিজরির পর নবীজি আর কোনো মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। কারণ, কোরআন মাজিদে তাকে এ মর্মে বারণ করা হয়েছিল। (দ্র. সুরা আহযাব, আয়াত-৫২)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত