সমগ্র পৃথিবী যখন পাপ-পাঙ্কিলতার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত ছিল, পাশবিকতা আর আস্ফালন ব্যাপক হারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, হত্যা-লুণ্ঠন মানুষের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল, কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়া ছিল মানহানির কারণ আর এ কারণে চালু করা হয়েছিল চরম বর্বরতাপূর্ণ এক প্রথা, তা হলো কন্যাসন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা। তখন ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্বশ্রেণির মানুষের অধিকার আদায় করার লক্ষ্যে একজন আপসহীন মহামানবের আবির্ভাব অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল! এমনই এক ক্ষণে ভোরের সমীরণ নিয়ে স্নিগ্ধ প্রাতঃকালে আবির্ভূত হলেন প্রতিশ্রুত সেই মুক্তির দিশারি।
অন্ধকার যুগের পশুসুলভ জীবনাচার ও সামাজিক অন্যায়-অবিচারের তমসা থেকে মানবতাকে সভ্যতার আলোর দিকে এগিয়ে নিতে মুক্তির মহান বাণী নিয়ে আসেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অবিসংবাদিত মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সঙ্গে নিয়ে আসেন শান্তি, সাম্য, ঐক্য, কল্যাণের শুভ সংবাদ। ছোটবেলা থেকে রাসুল (সা.) মানবতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অভিলাষী ছিলেন, অন্যায়-অনাচার নির্যাতন ও শোষণ নির্মূলে ছিলেন সচেষ্ট, অসহায় মানুষকে পাশবিকতা ও আস্ফালন থেকে রক্ষা করার জন্য নবুয়তের ১৫ বছর আগে ২৫ বছর বয়সে গড়ে তোলেন ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে এক যুব সংঘ!
জাহেলি যুগের অবাঞ্ছনীয় পরিস্থিতি বালক মুহাম্মদ (সা.) এর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে, তিনি সমাজকে এহেন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে সর্বদা চিন্তায় মগ্ন থাকতেন, অবশেষে সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে তাঁর তনু-মনে এক অভিনব চিন্তার উদ্রেক হয়, তিনি তাঁর সমবয়সি কিছু যুবককে নিয়ে ৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে এই যুবসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন! জুলুম, নিপীড়ন-নির্যাতন দমনের লক্ষ্যে এই সংগঠনের গোড়াপত্তন হলেও ধরণা করা হয়, বিশেষ একটি যুদ্ধের ভয়াবহতার পরিপ্রেক্ষিতে এই সংগঠন গঠিত হয়!
এই সংঘের কর্মসূচি ছিল : ১. আমরা দেশের অশান্তি দূর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব ২. বিদেশি লোকদের ধন-প্রাণ, মান-সম্মান রক্ষা করতে সদা সচেষ্ট থাকব ৩. বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সহানুভূতি ও সদ্ভাব স্থাপনে কুণ্ঠাবোধ করব না ৪. অত্যাচারী ও তার অত্যাচারের হাত থেকে অত্যাচারিতকে রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করব! এভাবে মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত ‘হিলফুল ফুজুল’ বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম কল্যাণী সেবাসংঘের মর্যাদা লাভ করে এবং এর মধ্য দিয়ে মহানবী (সা.) নবী হওয়ার আগেই শান্তির অগ্রদূত হিসেবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করেন।
জাহেলি যুগে আরব সমাজের অন্যায় অনাচারের প্রতিরোধে হিলফুল ফুজুল গঠিত হলেও মহানবী (সা.)-এর নেতৃত্বে গঠিত এ শান্তি সংগঠনটি সর্বকালের যুবকদের জন্য এক আদর্শ শিক্ষা ও পথনির্দেশক! বর্তমান যুগেও জাহেলি যুগের মতো সমাজে বহু মানুষ অত্যাচার, অনাচার ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এখনও সমাজে হত্যা, লুণ্ঠন, নারী নির্যাতন, সুদ, ঘুষ প্রভৃতি অসামাজিক কাজ কম-বেশি প্রচলিত রয়েছে। যদি আজও যুব সমাজ হিলফুল ফুজুলের আদর্শ শিক্ষায় লালিত হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে স্বোচ্চার হয় এবং সমাজের সব অন্যায়-অনাচার প্রতিরোধে শান্তি সংগঠন গড়ে তোলে তবে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন অনেকটাই নিশ্চিত হবে। মহানবী (সা.)-এর এ আদর্শ শিক্ষা প্রত্যেক যুবকের মনে প্রতিফলিত হোক। আমিন।