জাদু-টোনা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে

জারির আহমদ

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

জাদু-টোনা বা ব্ল্যাক ম্যাজিক শব্দগুলো শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে রহস্য, ভয় আর কিছু অদৃশ্য শক্তির উপস্থিতি। মানুষের মধ্যে এসব নিয়ে কৌতূহল আছে ব্যাপক, আবার কেউ কেউ এ ধরনের কাজকে দেখে ক্ষমতার উৎস হিসেবে। তবে ইসলাম এই বিষয়টিকে শুধু কল্পকাহিনি হিসেবে দেখেনি। বরং ইসলামে জাদু-টোনাকে বাস্তব, ভয়াবহ এবং স্পষ্টভাবে হারাম (নিষিদ্ধ) কাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে জাদু সম্পর্কে সরাসরি আলোচনা এসেছে। আল্লাহ বলেন, ‘সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা পাঠ করত, তারা তা অনুসরণ করত। মূলত সুলায়মান কুফুরি করেনি, বরং শয়তানরাই কুফুরি করেছিল, তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত এবং যা বাবিলের দুজন ফেরেশতা হারুত ও মারুতের ওপর পৌঁছানো হয়েছিল এবং ফেরেশতাদ্বয় কাউকেও (তা) শিখাত না যে পর্যন্ত না বলত, আমরা পরীক্ষাস্বরূপ, কাজেই তুমি কুফুরি করো না। এতদসত্ত্বেও তারা উভয়ের কাছ থেকে এমন জিনিস শিক্ষা করত, যা দিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করত। মূলত তারা তাদের এ কাজ দ্বারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া কারও ক্ষতি করতে পারত না। বস্তুত এরা এমন বিদ্যা শিখত, যা দিয়ে তাদের ক্ষতি সাধিত হত আর এদের কোনো উপকার হতো না। অবশ্যই তারা জানত যে, যে ব্যক্তি ওই কাজ অবলম্বন করবে পরকালে তার কোনো অংশ থাকবে না, আর যার পরিবর্তে তারা স্বীয় আত্মাগুলোকে বিক্রয় করেছে, তা কতই না জঘন্য, যদি তারা জানত!’ (সুরা বাকারা : ১০২)।

এই আয়াত প্রমাণ করে যে, জাদুর অস্তিত্ব বাস্তব, কিন্তু তা আল্লাহর নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। ইসলাম এটিকে এমন এক গোনাহ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা মানুষের ঈমানকে ধ্বংস করতে পারে। হাদিসেও জাদুর ভয়াবহতা নিয়ে বহু সতর্কবার্তা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাতটি ধ্বংসকারী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, যার একটি হলো জাদু করা বা করানো।’ জাদু-টোনার মাধ্যমে কেউ যখন অপরকে ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তখন সে মূলত শয়তানের সাহায্য নেয়, যা ইসলামি আকিদার পরিপন্থি। অনেক সময় এসব কার্যক্রমের জন্য কোরআন অবমাননা, কবরস্থানে অপবিত্র আচরণ বা কুফরি কাজ করতে হয়- যা সরাসরি শিরকের শামিল।

তবে ইসলাম শুধু নিষেধ করে থেমে যায়নি, বরং প্রতিকারও দিয়েছে। ইসলামে বৈধ ঝাড়ফুঁক বা রুকইয়ার মাধ্যমে জাদুর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় রয়েছে। রাসুল (সা.) নিজে কোরআনের আয়াত দ্বারা চিকিৎসা করতেন এবং সাহাবিদেরও তা শিক্ষা দিয়েছেন। আয়াতুল কুরসি, সুরা ফালাক, সুরা নাস, সূরা ফাতিহা- এইসব সুরা বা আয়াতগুলোর মাধ্যমে একজন মুমিন নিজেকে রক্ষা করতে পারে। তবে এটাও মনে রাখা জরুরি, জাদুর ভয়ে আতঙ্কিত না হয়ে একজন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা এবং শিরকমূলক যেকোনো কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা।

জাদু-টোনা কল্পনা নয়, বাস্তব ও শয়তানি একটি কাজ- যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এটি শুধুমাত্র মানুষের দুনিয়া নয়, আখেরাতকেও ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত এ ধরনের কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা, এগুলোকে প্রশ্রয় না দেওয়া এবং সর্বদা আল্লাহর সাহায্য ও রহমতের আশ্রয়ে থাকা।

যদি কোনো মোমিন-মুসলমান জাদুর মাধ্যমে ভালো কিছু অর্জন ও মন্দ কিছু বর্জন করেন এবং প্রকাশ্য ও গোপন তন্ত্র-মন্ত্র বা জাদুর মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি সাধন করেন, তাহলে তার ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, জাদুকরের শাস্তি হত্যা। আর এ অভিমত পোষণ করেছেন, ওমর, ওসমান বিন আফফান, ইবনে আমর বিন আব্দুল আজিজ, আবু হানিফা এবং ইমাম মালেক।

ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, যখন মুসলমান জাদুকর কুফুরি কালামের মাধ্যমে জাদু করে তবে তাকে হত্যা করা হবে। আর তার তওবা ও গ্রহণীয় হবে না। আর না তাকে তওবা করতে বলা হবে। কেননা, এটা এমন বিষয় যার দ্বারা আল্লাহর নির্দেশকে লঙ্ঘন করা হয়। এজন্য মহান আল্লাহ জাদুকে কুফুরি বলে আখ্যায়িত করেছেন।

লেখক : আলেম ও মাদ্রাসা শিক্ষক