দুর্ঘটনা রোধে নবীজির সতর্কতা

আব্দুর রশিদ তালুকদার

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মুহাম্মাদ (সা.) অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন। তাঁর নির্দেশ আজও অগ্নিনিরাপত্তার জন্য এক কার্যকরী গাইডলাইন।

আগুনকে শত্রুজ্ঞান করুন : রাসুলুল্লাহ (সা.) আগুনকে আমাদের চরম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শত্রু যেমন সুযোগ পেলেই আঘাত হানে, তেমনি আগুনকেও সর্বদা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। তিনি বলেন, এই আগুন নিঃসন্দেহে তোমাদের চরম শত্রু। সুতরাং যখন ঘুমাতে যাবে, তখন তা নিভিয়ে দেবে। (বোখারি : ৬২৯৪)।

উদাসীনতা নয়, চাই সতর্কতা : আগুনের ব্যাপারে কোনো ধরনের ঢিলেমি বা উদাসীনতা কাম্য নয়। নবিজি (সা.) ঘুমন্ত অবস্থায় আগুন না রেখে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তোমাদের ঘরে আগুন রেখে ঘুমাবে না। (বোখারি : ৬২৯৩)।

আগে প্রতিরোধ, পরে নয় : দুর্ঘটনা ঘটার পর আফসোস না করে, আগে থেকেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে এটাই ইসলামের নীতি। রাসুল (সা.) রাতে দরজা বন্ধ করা, বাতি নিভিয়ে ফেলা এবং পানাহারের পাত্র ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, ইঁদুরের মতো ছোট প্রাণীও বাতির ফিতা টেনে এনে বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। (বোখারি, ৬২৯৫)।

জনসচেতনতা তৈরি : ইসলামি নেতৃত্ব ও সমাজের দায়িত্ব হলো অগ্নিদুর্ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। নবীজির (সা.) অসংখ্য সতর্কবাণী প্রমাণ করে যে, এটি সামাজিক দায়িত্ব।

আল্লাহকে স্মরণ করা : আগুন বা অন্য কোনো বিপজ্জনক কাজ শুরুর আগে আল্লাহর নাম স্মরণ করা উত্তম। রাসুল (সা.) প্রতিটি কাজ শুরুর আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলার এবং ঘরের জিনিসপত্র ঢাকার সময় আল্লাহকে স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে শয়তানের প্রভাব কমে যায় এবং বরকত আসে। (বোখারি : ৩২৮০)।

অগ্নিকাণ্ড শুরু হলে দ্রুত অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ‘তাকবির’ (আল্লাহু আকবার) বলা সুন্নত। নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা যখন অগ্নিকাণ্ড দেখবে তাকবির দেবে। কেননা, তাকবির আগুন নির্বাপিত করে। (জামিউস সগির, ৬৩৭) আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, শয়তান আগুন থেকে সৃষ্টি এবং সে নিজের বড়ত্ব প্রকাশ করতে চায়। বান্দা যখন আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করে, তখন শয়তানের প্রতাপ কমে যায় এবং আগুন নিভে যেতে সহায়তা করে। কারও ঘরবাড়ি বা সম্পত্তি অগ্নিদগ্ধ করা ইসলামে গুরুতর অপরাধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোরভাবে বলেছেন, আল্লাহ ছাড়া কেউ আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে পারবে না। (বুখারি, ৩০১৬)।

হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, নাশকতার কারণে আর্থিক ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হবে। যদি কারও প্রাণহানি ঘটে, তবে অপরাধীকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হবে। আগুন একদিকে যেমন আমাদের সভ্যতার প্রতীক, তেমনি অন্যদিকে চরম শাস্তির মাধ্যম। ইসলামি শিক্ষা অনুযায়ী, সর্বোচ্চ সতর্কতা, আল্লাহর ওপর ভরসা এবং নৈতিকতা বজায় রাখাই আমাদের একমাত্র মুক্তির পথ। ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং সম্মিলিত সতর্কতায় আমরা আজকের সমাজে অগ্নি-বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।