ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সময়ের হিসাব

শায়খ জসিম উদ্দিন মাহদী
সময়ের হিসাব

কথায় আছে ‘সময় ও স্রোত কারও জন্য অপক্ষা করে না।’ মানবজীবনটাও দীর্ঘ সময়ের সমষ্টির নাম, যা নির্দিষ্ট একটা জায়গায় থেমে যাবে। যখন তার নির্ধারিত সময় এসে যাবে, তখন আর আগপিছ হবে না। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যখন মানুষের অন্তিম মুহূর্ত এসে যাবে, তখন আমি তাকে আগপিছ হতে দেব না।’ (সুরা মোনাফিকুন)। আরেক জায়গায় এরশাদ হয়েছে, ‘মহান মালিক তিনিই যিনি মানুষের মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা মূলক : ২)। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষণ ও মুহূর্ত অনেক দামি ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা উচিত।

পবিত্র কোরআন তাকে হায়াত বা সময় বলে উল্লেখ করেছেন। এ হায়াত বা সময়ের গুরুত্ব আমরা হারানোর পরই উপলব্ধি করি। বাংলা ভাষায় যাকে বলে, ‘সময় গেলে সাধন করা বা হওয়া।’ আল্লাহ তায়ালা সময়ের গুরুত্ব বোঝাতে অসংখ্য আয়াতে কারিমা নাজিল করেছেন। আল্লাহ বলেন : ‘সময়ের কসম! নিশ্চয়ই ঈমানদার, সৎকর্মশীল, সত্যের পথে দাওয়াত দানকারী এবং ধৈর্যশীল ছাড়া সব মানুষ ধ্বংসের মধ্যে।’ (সুরা আসর : ১-৩)। আল্লাহ মানবজাতিকে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। সময় সব কিছুর প্রধান নেয়ামত। কেননা মানব জীবনের মূল পুঁজি হচ্ছে সময়। এজন্য সময়টা ব্যয় করার ক্ষেত্রে একটু ভেবেচিন্তে ব্যয় করতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদও করেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আর গভীরভাবে ফিকির করে দেখ, আগামী দিনের জন্য কী প্রেরণ করেছ? আল্লাহকে ভয় কর, কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সব কৃতকর্ম সম্পর্কে খবর রাখেন।’ (সুরা হাশর : ১৮)।

মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের দুনিয়ার সময়টা পরকালের জন্য ফসল উৎপাদনের ক্ষেতের মতো।’ (মিশকাত)। তিনি সময় সম্পর্কে উম্মতকে হুঁশিয়ার করে এরশাদ করেছেন, ‘মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন দিবসে মানুষকে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। তার জীবন কীভাবে ব্যয় করেছে? তার যৌবনকাল অতিক্রম করে কীভাবে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে? কোথায় থেকে কীভাবে সম্পদ অর্জন করেছে? আর কোন পথে তা খরচ করেছে? অর্জিত জ্ঞান দিয়ে কী আমল করেছে?’ এভাবেই আল্লাহর কাছে প্রতিটি মুহূর্ত ও কাজের হিসাব দিতে হবে।

শুধু তাই নয়, শরীরের প্রতিটি অঙ্গও আল্লাহর কাছে সেদিন সাক্ষী দেবে। আল্লাহ বলেন : বিচার দিবসে আমি মানবমুখে তালা লাগিয়ে দেব, তখন অপরাধীদের হাত কথা বলবে, আর পা সাক্ষ্য দেবে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে। (সুরা ইয়াসিন : ৬৫)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, পাঁচটি জিনিসের আগে অপর পাঁচটি জিনিসকে গুরুত্ব দাও ১. বৃদ্ধ হওয়ার আগে যৌবনকে ২. অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থকে ৩. দরিদ্র হওয়ার আগে স্বাবলম্বিতাকে ৪. ব্যস্ততার আগে অবসরতাকে ৫. মৃত্যুর আগে জীবনকে।

সময়ের সুফল ভোগ করতে হলে বর্তমান সময়কে সঠিক কাজে হিসাব করে ব্যয় করতে হবে। কেননা আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ‘যারা নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে, তাদের রবকে স্মরণ করে সময় অতিবাহিত করেছে আর নামাজ আদায় করেছে, তারাই সফলতা অর্জন করেছে। কিন্তু তোমরা উদাসীনভাবে দুনিয়ার জীবনে নিমগ্ন হয়ে আছ; অথচ আখেরাতের জীবনই স্থায়ী জীবন। (সুরা আলা)। সময়ের সঠিক ব্যবহারকারীকে কোরআন সফলতার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ‘ওই মোমিন সফলতা অর্জন করেছে, যে অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত রয়েছে।’ (সুরা মুমিনুন : ০২)।

সময়ের সঠিক ব্যবহারে যারা বড় হয়েছেন তাদের জীবনীতে দেখা যায় : ১. ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত, তখনও তিনি ফিকহি একটি মাসআলা নিয়ে চিন্তারত ছিলেন। ২. হজরত দাউদ তায়ি (রহ.) রুটির পরিবর্তে ছাতু খেতেন, কারণ জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বললেন, রুটির পরিবর্তে ছাতু খেলে ৫০ আয়াত বেশি তেলাওয়াত করা যায়।

সময়ের হিসাব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের আমল আমি নথিবদ্ধ করে রেখেছি। কেয়ামতের ময়দানে আমি তাদের গলায় তা ঝুলিয়ে দেব, তখন তারা তাদের সব কর্ম দেখবে আর আমি বলব, আজ তোমার কর্মগুলো তুমিই গণনা কর, তাহলে তোমার হিসাব নেওয়ার জন্য তুমিই যথেষ্ট হয়ে যাবে, অন্য কাউকে তোমার বিচারের জন্য ডাকতে হবে না। (সুরা বনি ইসরাইল : ১২-১৩)।

লেখক : গবেষক ও সম্পাদক, আল ফাতাহ পাবলিকেশন্স, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত