ঢাকা বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসের মূল্যায়ন

কাজী মারুফ
পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসের মূল্যায়ন

পাঁচ জিনিসের আগে পাঁচ জিনিসের মূল্যায়ন সম্পর্কিত হাদিসটি পুরো উম্মতের প্রতি আল্লাহর রাসুল (সা.) এর নসিহত এবং বিশেষ অসিয়ত। যেন উম্মতের প্রতিটি সদস্য সৌভাগ্যবান, সফল ও সর্বাঙ্গীণ সুন্দর জীবন লাভ করতে পারে। রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে মূল্যায়ন করো। তাহলো, যৌবনকে মূল্যায়ন করো বার্ধক্যের আগে। সুস্থতাকে মূল্যায়ন করো অসুস্থতা আসার আগে। সচ্ছলতাকে মূল্যায়ন করো দরিদ্রতা আসার আগে। অবসরকে মূল্যায়ন করো ব্যস্ততা আসার আগে এবং জীবনকে মূল্যায়ন করো মৃত্যু আসার আগে। [মুস্তাদরাকে হকেম : ৭৮৪৬, বাইহাকির শুআবুল ঈমান : ১০২৪৮, সহিহুল জামে: ১০৭৭]।

মোমিনের ওপর আবশ্যক যে, সে মহান আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে তার যৌবন ও শক্তির সদ্ব্যবহার করবে। সে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদান করবে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহ অনুসারে জীবনকে পরিচালনা করবে। আর এসব কিছু করবে বার্ধক্য আসার আগে, যখন সে ইবাদত করতে অক্ষম হয়ে পড়বে।

প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘যৌবনকাল ইবাদতে কাটানো যুবক সেই সাত ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে মহান আল্লাহ কেয়ামতের কঠিন অবস্থায় তার আরশের ছায়াতলে স্থান দান করবেন আর সেদিন তার ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না।’ [বোখারি : ৬৬০]।

সুস্থতাকে বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশাল নেয়ামত হিসেবে অভিহিত করা হয়। একজন অসুস্থ ব্যক্তির অসুস্থতার কারণে নিজেকে চালানোই তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। অন্য কোনো কাজ করা তার জন্য অচিন্তনীয়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দিনটি পারিবারিক নিরাপত্তাবোধ ও সুস্থতার মধ্য দিয়ে শুরু করতে পারল এবং নিজের দিনটিকে কাজে লাগাতে পারল, সে যেন সমগ্র দুনিয়া অধিকার করল।’ [তিরমিজি : ২৩৪৬]।

দুনিয়ায় ধন-সম্পদ যেরূপ আমাদের জন্য একটি পরীক্ষার উপকরণ, তেমনি এটিও আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নেয়ামত, যদি তার সঠিক ব্যবহার হয়। একজন সচ্ছল সম্পদশালী ব্যক্তি একজন অসচ্ছল সম্পদহীন ব্যক্তির তুলনায় সমাজের মানুষকে অধিক সহায়তা প্রদান করতে পারে। মানুষকে সহায়তার বিনিময়ে আল্লাহ ওই সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য কোরআনে উত্তম পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘এমন কে আছে যে, আল্লাহকে করজ দেবে, উত্তম করজ; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন? আল্লাহই সংকুচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তারই কাছে তোমরা সবাই ফিরে যাবে।’ [সুরা বাকারা : ২৪৫]।

ইসলামে অলস সময় কাটানোকে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অবসরকে সবসময় আমাদের নিজেদের জন্য এবং সমাজের অন্যান্য লোকের উপকারের জন্য কাজে লাগানো উচিত।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুটি নেয়ামত রয়েছে, যা অধিকাংশ লোকই (অবহেলায়) হারায়। তাহলো, সুস্থতা এবং অবসর সময়।’ [বোখারি : ৬৪১৩]।

আমরা সবাই মৃত্যুবরণ করব। এর কোনো ধরনের ব্যতিক্রমই সম্ভব হবে না। কিন্তু দুনিয়ার এ জীবনকে আমরা এমনভাবে কাজে লাগাতে পারি, যাতে করে তা আমাদের জন্য আখেরাতের অনন্ত জীবনে উপকারে আসে।

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যদি আপনি দেখতেন যখন অপরাধীরা তাদের পালনকর্তার সামনে নতশির হয়ে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম। এখন আমাদের আবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। আমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়ে গেছি।’ [সুরা আস-সাজদা : ১২]।

সুতরাং, সময় চলে যাওয়ার আগেই আমাদের সময়কে কাজে লাগানো জরুরি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপলব্ধি করে কাজে পরিণত করার তৌফিক দান করুন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত