
অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কুষ্টিয়ার আটটি নদী। অবৈধ দখল-দূষণ, পলি জমে যাওয়া ও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এগুলো মরা খালে পরিণত হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে অনেক স্থানে প্রভাবশালীরা নদীর বুকে পিলার দিয়ে বিভিন্ন পাকা স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। নদ-নদী দখলের পাশাপাশি সমানতালে চলছে নদী দূষণের পাল্লা। কলকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদ-নদীতে। কোথাও কোথাও ড্রেনের সংযোগ, এমনকি মলমূত্রও গিয়ে মিশছে নদীতে। দৌলতপুর থেকে শুরু করে খোকসা উপজেলার মাছপাড়া পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার বিস্তৃত পদ্মা নদী। এর প্রধান শাখা গড়াই নদী ৫০ কিলোমিটার, গড়াই নদীর শাখা কালী নদী ছেঁউড়িয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার, সাগরখালী নদী ভেড়ামারা থেকে ১৫ কিলোমিটার এবং হিসনা নদী ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মধ্যে কয়েকটি নদীর পানি প্রবাহ নেই। দৌলতপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা থেকে উৎপন্ন মাথাভাঙ্গা ও হিসনা নদী। নদী দুটির বেশিরভাগ জায়গাই এখন দখলদারদের কবলে। বর্ষা মৌসুমে নদী দুটির কোথাও কোথাও পানি দেখা গেলেও শুকনো মৌসুমে একেবারে মরা খালে পরিণত হয়। ভেড়ামারা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা থেকে উৎপন্ন চন্দনা নদীর অস্তিত্ব এখন আর চোখে পড়ে না। নদীর বেশিরভাগ প্রভাবশালীদের দখলে। মিরপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সাগরখালী নদীটি এখন মৃতপ্রায়। কয়েক বছর আগে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে খনন করে নদীটি আবার সচল করার উদ্যোগ নিলেও কোনো সুফল মেলেনি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া গড়াইয়ের শাখা কুমার নদে বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করা হচ্ছে। ঝাউদিয়া ও বৈদ্যনাথপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় নদীর বড় অংশ দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। কুমারখালীর ডাকুয়া ও কালী নদী শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। খোকসা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত গড়াইয়ের অন্যতম শাখা সিরাজপুর হাওর নদীটি শুকিয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ার নদ-নদী ও খালের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত তিন হাজার দখলদার রয়েছে। ফলে নদ-নদী ও খালের প্রবাহ এখন আর স্বাভাবিক নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন পৃথকভাবে এসব দখলদার চিহ্নিত করেছে। জেলার ছয়টি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া কার্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন করে এ তালিকা তৈরি করেছে। সবচেয়ে বেশি দখলদার রয়েছে ভেড়ামারার হিসনা নদীতে। সেখানে নদী দখল করে পাকা দালানও করা হয়েছে। নদীর বুকে পানি না থাকায় কোনো কোনো জায়গায় ধানচাষ করা হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটা একটা নদী। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, নদ-নদী ও খাল দখলকারীদের তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। যে কোনো উপায়ে নদ-নদী ও খালের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে জেলায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে। তবে খুব শিগগিরই এসব অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।