
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ ২ বছর দাঁড়াতে পারেনি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শিল্প। এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দরুণ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন জামদানি ব্যবসায়ী ও তাঁতিরা। তাই পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কর্মমুখর হয়ে উঠেছে রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া জামদানি পল্লি। সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, দেশের বস্ত্র বয়নের ইতিহাস আর সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে জামদানি শাড়ির নাম। প্রাচীন কালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে ঢাকাই জামদানি নারীদের কাছে এক পরিচিত নাম। ২০০ বছরের পুরোনো শিল্পের জামদানি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে হাতে তৈরি হয়। দেশ-বিদেশে জামদানি শাড়ি সমান জনপ্রিয়। প্রাচীনকালে ঢাকাই মসলিনের ওপর জ্যামিতিক নকশাদার বা বুটিদার যে বস্ত্র বোনা হতো তারই নাম জামদানি। কালের বিবর্তনে মসলিন শাড়ি হারিয়ে গেলেও রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া গ্রাম ও এর আশপাশে ২০০ বছর ধরে টিকে আছে ঢাকাই জামদানি। এখানকার ২৫৬০টি পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বংশ পরম্পরায় রপ্ত করা এখানকার দক্ষ কারিগররা তাদের স্মৃতি থেকে জামদানি শাড়িতে চন্দ্রপাড়, চন্দ্রহার, হংস, ঝুমকা, পান্না হাজার, দুবলি জাল, বুটিদার, তেরছা, জালার, ডুরিযা, চারকোণা, মযর প্যাঁচ, কাউয়ার ঠ্যাঙা পাড়, চালতা পাড়, ইঞ্চি পাড়, বিলাই আড়াকুল, কচুপাতা পাড়, বাড়গাট পাড়, করলাপাড়, গিলা পাড়, গোলাপফুল, জুঁইফুল, পদ্মফুল, কলারফানা, আদারফানা, সাবুদানা, কলসফুল, মুরালি জাল, কচি পাড়, মিহিন পাড়, কাঁকড়া পাড়, শামুকবুটি, প্রজাপতি, বেলপাতা পাড়, জবাফুল, বাদুড় পাখিসহ হরেক নামের নকশা ফুটিয়ে তুলেন রেশমের মিহি সুতোয়। প্রকারভেদে এসব নকশায় তৈরি একেকটি শাড়ি বিক্রি হয় ৩ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত।
এবার জামদানি বাজারের বড় একটা অংশ দখল করেছে অনলাইন কেনাকাটা। ব্যবসায়ীদের দাবি, অনলাইন বাজারে মোটামুটি বিক্রি থাকলেও দোকানে জামদানির কেনাবেচা একেবারেই কম। তাছাড়া বিদেশে এখনও সেভাবে রপ্তানি শুরু না হওয়ায় মহামারির পর এবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি জামদানি শিল্প। জামদানি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের একটি শাড়ি তৈরি করতে সপ্তাহখানেক সময় লেগে যায়। অথচ ভারত থেকে আমদানি করা সস্তামানের সুতো আর মেশিনে একটি নকল জামদানি তৈরি হয়ে যায় মাত্র কয়েক ঘণ্টায়। এতে করে বদনাম হচ্ছে আসল জামদানি শাড়ির। এ ব্যাপারে নোয়াপাড়া বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর জামদানি পল্লি স্থবির ছিল। অনেক ব্যবসায়ী কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এবার ঈদে জামদানি শাড়ির চাহিদা বেড়েছে। আশা রাখি লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী জামদানি শিল্প। বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) বলেন, ঐতিহ্যের নিদর্শন এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে জামদানি ভিলেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কাজও এগিয়েছে খানিকটা। তাছাড়া সাধারণ থেকে সব শ্রেণির মানুষের ক্রয় সীমার মধ্যে থাকা এ শিল্পের প্রচার-প্রসারে করা হবে সব ধরনের সরকারি সহযোগিতা।