ঢাকা ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বন্যার পানিতে মিশে গেছে কৃষকের স্বপ্ন

বন্যার পানিতে মিশে গেছে কৃষকের স্বপ্ন

যশোরের কেশবপুরে বন্যায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি টানা বৃষ্টি ও নদ-নদীর উপচে পড়া পানির কারণে কেশবপুর পৌর এলাকাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যায় রূপ নিয়েছে। আপার ভদ্রা নদী পলিতে ভরাট হওয়ায় হরিহর নদ ও বুড়িভদ্রা নদীর পানি প্রবাহে বাধা পেয়ে এলাকায় পানি ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কেশবপুরে কৃষকরা রোপা আমন নয় হাজার ৫০৯ হেক্টর, সবজি ৬০০ হেক্টর, মরিচ ২৬ হেক্টর, হলুদ ১০০ হেক্টর, তরমুজ ১১ হেক্টর, আখ ৫৬ হেক্টর, পান ১৩০ হেক্টর ও তুলা ২৫ হেক্টর আবাদ করেছিলেন। বন্যায় রোপা আমন এক হাজার ৮৩০ হেক্টর, সবজি ২৩৯ হেক্টর, মরিচ ১৮ দশমিক পাঁচ হেক্টর, হলুদ ১৮ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চার দশমিক পাঁচ হেক্টর, আখ তিন দশমিক পাঁচ হেক্টর, পান ১২ দশমিক তিন হেক্টর ও তুলা তিন হেক্টর ক্ষতি হয়েছে। এসব ফসল থেকে উৎপাদন হতো, আমন পাঁচ হাজার ৮৫৬ টন, সবজি চার হাজার ৩০২ টন, মরিচ ৪৪ দশমিক চার টন, হলুদ টন, তরমুজ ৯৯ টন, আখ ৩৫ টন, পান ১১৬ দশমিক ৮৫ টন ও তুলা ১৪ দশমিক চার টন। উপজেলার ভোগতী নরেন্দ্রপুরের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, তিনি একটি সমিতি থেকে ৩০ হাজার টাকা লোন নিয়ে ভবানীপুরের মাঠপাড়া বিলে পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলেন। বন্যার পানিতে তার সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কীভাবে তিনি সমিতির টাকা পরিশোধ করবেন তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। গত বছর ওই জমিতে আমন আবাদ করে প্রতি কাটায় এক মণ করে ধান পেয়েছিলেন। এবার কোনো ধান পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় তার সব স্বপ্ন বন্যার পানিতে মিশে গেছে বলে জানান। সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম মুনজুর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নের অধিকাংশ বিলে মাছের ঘেরের বেড়িতে আবাদ করা সবজি গাছ মরে যাওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। অফুরন্ত ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন না কৃষক। কেশবপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন আলা বলেন, উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলাম গত বুধবার রাতে এশার নামাজ পড়ার পর অসুস্থ হয়ে মারা যান। মধ্যকুল গ্রামটি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে রাস্তাঘাট তলিয়ে রয়েছে। যে কারণে ওই ব্যক্তির মরদেহ বাড়ি থেকে নৌকায় করে দূরের কবরস্থানে নেয়া হয়। কবরস্থানটিও পানিতে তলিয়ে থাকায় পাশের উঁচু স্থানে তাকে দাফন করা হয়। মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির পলাশ বলেন, তার ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। অনেক সবজি খেত নষ্ট হয়ে মরে গেছে। কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পেড়েছেন। গ্রামের রাস্তা পানির নীচে রয়েছে।

কেশবপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ থেকে ১৬ তারিখে ৪ দিনে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৯১ মিলি মিটার ও মাসের শেষ সপ্তাহের ৩ দিনে বৃষ্টি হয়েছে ৮৫ মিলি মিটার। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বর মাসের গত ২৭ দিনে কেশবপুর উপজেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭৬ মিলি মিটার। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত অনেক বেশি হয়েছে।

কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, হরিহর নদের কেশবপুরের বড়েঙ্গা এলাকায় একটি এবং চুকনগর ব্রিজের নিকট একটি ভাসমান স্কেভেটর দিয়ে খনন কাজ চালানো হচ্ছে। দ্রুত জলাবদ্ধতার পানি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে কেশবপুর শহরের বিভিন্ন বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। ফসলের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বন্যায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত