ঢাকা ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সেনাসদস্য হওয়ার স্বপ্ন ছিলো শহীদ রিয়াজের

সেনাসদস্য হওয়ার স্বপ্ন ছিলো শহীদ রিয়াজের

ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবময় ঘটনা বলে বিবেচিত। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুরুতে আন্দোলন অহিংস ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগসহ বেপরোয়া হয়ে উঠলে ১৫ই জুলাই আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। দেশব্যাপী জনগণ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফুসে ওঠে। ১৯ জুলাই বিকালে বাসা থেকে বের হন কেরানীগঞ্জ উপজেলার ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্র রিয়াজ হোসেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিতে অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে সে বসিলা ব্রিজ পেরিয়ে মোহাম্মদপুরে অবস্থান নেয়। বাসা থেকে যাওয়ার সময় মা শেফালী বেগম তাকে যেতে নিষেধ করেন।মায়ের নিষেধের কথা না শুনে রিয়াজ বলে- সবাই যদি ঘরে থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি কখনো পূরণ হবে না। এরপর সে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

এই যাওয়াই ছিল তার জীবনের শেষ যাত্রা। এরপরে আর তার বাড়িতে ফিরে আসা হলো না। ওই দিন বিকালে বছিলা ব্রিজ ছেড়ে মোহাম্মদপুর র‍্যাব ক্যাম্প ২ এর সামনে মাথায় গুলি লেগে নিহত হন রিয়াজ। সেটা ছিল একটি বিভীষিকাময় ঘটনা। ঘটনাস্থলে নিহত হন রিয়াজ। তার সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। লাশ পড়ে ছিল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে।

অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরে ২০ জুলাই বিকালে ওই হাসপাতালের মর্গে রিয়াজের লাশের সন্ধান পায় পরিবার। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার তারানগর ইউনিয়নের ছোট ভাওয়াল গ্রামের বাসিন্দা আসাব উদ্দিনের ছিল ৪ সন্তান। তার সন্তানদের নাম আফরোজা আক্তার লাবনী (৩৩), জুয়েল হোসেন (২৭), রানা হোসেন (২২), সর্বকনিষ্ঠ ছিল রিয়াজ হোসেন (২১)। বড় বোন নাম আফরোজা আক্তার লাবনী (৩৩) বলেন, বাবা ও দুই ভাই কৃষিকাজ করে কোনো রকম সংসার চালায়। সবার ছোট রিয়াজকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। ওর ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া। কিন্তু ঘাতকের বুলেটে রিয়াজের সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হলো না। ও বলতো, এই আন্দোলন না করলে মেধাবীদের অনেকেই নাকি চাকরি পাবে না। এ আন্দোলন শুধু আমার একার জন্য না এটা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য। রিয়াজের মা শেফালী বেগম তার ছেলের কথা বলতে বারবার মুর্ছাজায় এবং বলেন, আমার কলিজার টুকরা সন্তানকে যারা হত্যা করেছে আল্লাহপাক তাদের উপযুক্ত বিচার করবেন। বাবা আসাব উদ্দিন বলেন, আমার ছেলে কোনো দল করত না। ছেলের সেনাবাহিনীতে চাকরি করার ইচ্ছা ছিল। দুই ছেলে মিলে অনেকবার সেনাবাহিনীত চাকরির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদের চাকরি করার হলো না। আমার ছেলেকে কেন এভাবে নির্মমভাবে মরতে হলো? আমি ছেলে হত্যার সঠিক বিচার চাই। ১৩ আগস্ট সাবেক ডাকসুর বিপি আমানুল্লাহ আমান শহীদ রিয়াজের আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে গিয়ে বলেন, বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশব্যাপী শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

শহীদ রিয়াজের আত্মত্যাগের বিনিময় বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য রিয়াজ। তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তিনি কেরানীগঞ্জের গাটাচর চত্বর শহীদ রিয়াজ হোসেন চত্বর হবে বলে ঘোষণা দেন। এই চত্বরে মাধ্যমে শহীদ রিয়াজ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে বলে জানান। বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনে শহীদ রিয়াজের কবর জিয়ারত করে কেরানীগঞ্জের তারানগর ছোট ভাওয়াল কবরস্থান ঈদগাহ ময়দানে তিনি এসব কথা বলেন। পরে তিনি শহীদ রিয়াজের পরিবারের কাছে নগদ অর্থ প্রদান করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত