ঢাকা ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রতিমা কারিগরদের পারিশ্রমিক বাড়েনি

প্রতিমা কারিগরদের পারিশ্রমিক বাড়েনি

সনাতনীদের শারদীয় দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে সর্বত্র। গতকাল বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের দেবীপক্ষের শুরু হয়েছে। সনাতনীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্পীরা। হাতের নিপুণ ছোঁয়া ও রঙ-তুলির আঁচড়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গার অবয়ব। একইসঙ্গে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর অবয়বও ফুটিয়ে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টায় শিল্পীরা।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের তারটিয়া পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমাশিল্পীদের কেউ প্রতিমা তৈরি করছে, কেউ রঙের ছোঁয়া দিচ্ছেন। শিল্পীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। দিনরাত প্রতিমার সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যস্ত ব্যয় পার করছেন।

প্রতিমাশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের চেয়ে কাজ অনেক বেড়েছে। প্রতিমা তৈরির উপকরণ এঁটেল মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশের দাম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে। সে তুলনায় প্রতীমা শিল্পীদের পারিশ্রমিক বাড়েনি।

প্রতিমা শিল্পী সুমন পাল, গোবিন্দ পাল, সন্তোষ পাল, সজীব পাল সহ অনেকেই জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবার রাষ্ট্রীক ভিন্ন পরিবেশের কারণে তারা সেভাবে কাজ করতে পারছেন না। প্রথম দিকে কোনো কাজই ছিল না। এখন কিছু কাজ এসেছে। গত বছরের তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম পূজামণ্ডপের কাজ চলছে। আয়োজকরা গত বছরের তুলনায় মজুরিও কম দিতে চাচ্ছে। বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতেই তারা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। কেউ কেউ মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছেন। রঙের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন প্রতিমাগুলোকে অলঙ্কার দিয়ে সাজিয়ে পূজারিদের বুঝিয়ে দিবেন।

তারা জানান, আগে যে বাঁশ ২০০-২৫০ টাকায় কিনতেন, এখন তা ৫০০-৬৫০ টাকায় কিনতে হয়। আগে তিন হাজার টাকার খড় দিয়ে একটা মণ্ডপের প্রতিমা হয়ে যেত। এখন একই মণ্ডপের প্রতিমা গড়তে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার খড় লাগে। খড়ের পরিমাণ একই কিন্তু দাম দ্বিগুণ। আগে যে প্রতিমা তৈরিতে খরচ হত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এখন সেই প্রতিমায় খরচ হয় ১ লাখ টাকার উপরে। তারা যে উপকরণ গত বছর ১২ হাজার টাকায় কিনেছেন, এবার তা কিনতে হচ্ছে ২৫ হাজার টাকায়। যে রঙ ১৫০ টাকায় কিনতেন, এখন তা ২০০-২৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অনেকের প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ হয়েছে। এখন রঙ ও সাজসজ্জার কাজ চলছে। অনেকে তাদের পছন্দের শাড়ি দিয়ে দেবী দুর্গাকে সাজাতে নামিদামি রঙ-বেরঙের শাড়ি, অলঙ্কার ও মাথার মুকুট দিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুণ ঝন্টু জানান, জেলায় এবার ১২০০-এর মতো মণ্ডপে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদ ও রাজনৈতিক দলের লোকদের সাথে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। জেলায় অন্য বছরের ন্যায় এবারও দুর্গোৎসব সুন্দর ও সার্থক হবে বলে আশা করেন তিনি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু জানান, দুর্গোৎসব উপলক্ষে তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম করা হচ্ছে। ১২৫ জনের স্ট্রাইকিং পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। মোটরসাইকেলে প্রায় ৪৬৩ জন বিভিন্ন ডিউটিতে থাকবে। পুলিশের ২৮টি পিকআপ গাড়িতে ১১২ জন পুলিশ সদস্য সব সময় দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া পুলিশের একটি টিম সাদা পোশাকে নজরদারি করবে। তিনি আরো জানান, জেলায় এবার সিসিক্যামেরা স্থাপন করা হবে। ড্রোনের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রত্যেকটা জায়গায় ছোট ছোট কন্ট্রোল রুম থাকবে। ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তারা সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করবেন। ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে এবারের দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত