শ্রেণি সংকটের পাশাপাশি নেই মাঠ-প্রাচীর
শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কুমিল্লার তিতাসের নানাহ প্রতিবন্ধকতায় খুঁড়িয়ে চলছে মধ্য বন্দরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ্রেণিকক্ষ সংকট, বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তা, মাঠ ও প্রাচীর নেই, নির্মাণ করা হয়নি ওয়াশব্লক। বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে স্থানীয় লোকজনদের ফেলা বর্জ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। ভবনের বারান্দা দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাঁটাচলায় কেঁপে উঠে ভবনসহ ভবনে থাকা আসবাবপত্র। বিশেষ করে মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে বিঘ্ন ঘটছে। এসব কারণে বিদ্যালয়ের আশেপাশের পরিবারগুলোর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অন্যত্র লেখাপড়া করাতে বাধ্য হচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কড়িকান্দি ইউনিয়নের মধ্য বন্দরামপুর স্কুলে নিজস্ব ৩৩ শতক ভূমি রয়েছে। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত উক্ত বিদ্যালয়ের ১৯৯৩ সালে সাইক্লোন সেল্টারের আওতায় তিনকক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে ২০০৮ সালে একই আদলে আরেকটি তিনকক্ষ বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ হয়। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১১২জন শিক্ষার্থী এবং প্রধান শিক্ষকসহ সহকারি শিক্ষকদের ৬টি পদ রয়েছে। তবে সর্বশেষ নিযুক্ত হওয়ায় সহকারী শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তার এবছরের ২২ আগস্ট যোগদান করলেও সে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছে। বর্তমানে ৫ জন শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
তবে ভবনের বেহাল দশা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়নি। জানা যায়, গৌরীপুর-হোমনা সড়ক থেকে বন্দরামপুর নয়াকান্দি সড়কের মধ্য বন্দরামপুরে গ্রামের উত্তরপাশে ফসলী জমিতে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। বন্দরামপুর-নয়াকান্দি সড়ক থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কোনো সড়ক নেই। গ্রামের তিনটি বাড়ির প্রধান গেইট দিয়ে উঠান ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ভবনের প্রবেশের সিড়ির পাশেই গবাদিপশুর বর্জ্যরে স্তপ দেখা যায়। সেখান থেকে বিভিন্ন জীবাণু আশেপাশে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। যা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তির একপাশে দুটি ভবন থাকলেও সামনে জায়গাটি ব্যবহারের অনুপোযোগি। নিচু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানি এবং শুল্ক মৌসুমে কাঁদামাটি ও কচুরীপানার কারণে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভবন দুটির ভেতর দিয়ে চলাচলের সময় পুরো ভবনসহ ভবনের মধ্যে থাকা আসবাবপত্র কেঁপে উঠে।
দুই ভবনের মাঝামাঝি স্থানে একটি টয়লেট থাকলেও সেটি অবস্থা খুবই নাজুক। বিদ্যালয়ের পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী জানান, মাঠের কারণে আমরা খেলাধুলা করতে পারছি না। খাবার পানি আসেনিকযুক্ত না কি আর্সেনিকমুক্ত জানি না। স্কুলের বারান্দা দিয়ে দৌড় দিলে বিল্ডিং থপথপ করে কাঁপে। ভয়ে থাকি। তারপরও বিদ্যালয়ে আসি। মধ্য বন্দরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হাছিনা বেগম বলেন, এলাকার লোকজন নিয়ে অনেক বার বৈঠকের পরও স্থানীয়দের অনিহায় বিদ্যালয়ে আসার রাস্তাটি ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। মাঠ ভরাট ও প্রাচীর নির্মাণের জন্য এক বছর আগে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছিলাম। কোনো সাড়া পায় নাই। বন্দরামপুর গ্রামে আরেকটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক মাদ্রাসা এবং ৩টি কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যালয়ের পরিবেশের উন্নতি না হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের এই স্কুলে ভর্তি করাতে অনিহা দেখাচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা পারভীন বানু বলেন, বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে আমি গিয়েছিলাম। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এটি একটি। যার ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়েছিল। সেই কারণে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজি কমিটি ও স্থানীয় লোকজনদের সহযোগিতা এবং সরকারি বরাদ্দের মাধ্যমে এ সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমাইয়া মমিন বলেন, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোর তালিকার চাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যেসব বিদ্যালয়গুলোর ভবন, মাঠ ও প্রাচীরের সমস্যা রয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে সেই সব সমস্যা সমাধান করা হবে।
