১০ মিটার রাস্তার কারণে অকেজো ৪৮১ কোটি টাকার প্রকল্প
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ৪৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি এখন খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। সড়ক নির্মাণের ৮ বছরেও সুফল পায়নি এই অঞ্চলের মানুষ। নেত্রকোণা জেলার বিশিউড়া থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত সাড়ে ২৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ গত ২ বছর আগে শেষ হলে রেলের জায়গায় অনুমোদন ছাড়া সড়ক নির্মাণ করায় বাগড়া বসায় রেলওয়ে বিভাগ। নেত্রকোণা থেকে ঢাকার দূরত্ব কমাতে ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইলের কানুরামপুর হয়ে ত্রিশাল দিয়ে কম সময়ে যাবার জন্য তৈরি করা হয়েছিলো এই রাস্তা। এতে অনেকদূর ঘুরে ময়মনসিংহ শহর হয়ে যাওয়ার ভোগান্তি পোহাতে হবে না। নেত্রকোণা জেলার বিশিউড়া থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত সাড়ে ২৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ২৬১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প ২০১৭ সালের মে মাসে অনুমোদন হয়েছিল। নির্মাণকাজ পায় যৌথভাবে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। এরপর শুরু হয় ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা। প্রকল্পটির মধ্যে নেত্রকোণা ছাড়াও পড়েছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা। এই দুই উপজেলায় পাঁচ কিলোমিটার অংশে জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে কাজ করা ব্যাহত ছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বর ও ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যথাক্রমে ১ম ও ২য় দফায় বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের মূল্য দেড় গুণ ধরা হলেও সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন গুণ করতে হয়। একই সাথে অতিরিক্ত ৩টি সেতু ও ২ হাজার ৪৩২ মিটার নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সংশোধিত প্রকল্প তৈরি হয়েছিল। ৪৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি একনেক সভায় সংশোধিত হিসেবে অনুমোদন দিয়ে তৃতীয় দফা সময় বাড়িয়ে নির্মাণের শেষ সময় ধরা হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর সড়ক নির্মাণ শেষ করা হলে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকায় আপত্তি জানায় রেলওয়ে বিভাগ। সড়কের মাঝখানে খুঁটি বসিয়ে বাগড়া বসায় ১০ ফিট রাস্তা নির্মাণে। সড়ক নির্মাণের ২ বছর পেরোলেও কোনো কাজেই আসছে না এই সড়কটি। নেত্রকোণা-ঢাকা সড়কে চলাচলকারী ট্রাক চালক মতি মিয়া বলেন, সময় এবং জালানি সাশ্রয়ের জন্য রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু মাত্র ১০ মিটারের এই রাস্তার জন্য ভারী যানবাহন এই রাস্তা ব্যবহার করে না। তবে আনলোড করা গাড়ি নিয়ে আমরা এই রাস্তা ব্যবহার করি। নেত্রকোণা-ঢাকা সড়কে চলাচলকারী ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার অটোরিকশা চালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এই সড়ক ব্যবহার করে ঢাকা থেকে নেত্রকোণা এলে ১ ঘণ্টার বেশি পথ কম লাগতো। কিন্তু আমরা আসা-যাওয়া করতে পারছি না। কোনো কোনো চালক ঝুঁকি নিয়ে এসে পৌরসভার একটি বিকল্প সড়ক ব্যাবহার করে কিন্তু সেই সড়কটিও খানাখন্দে ভরা। ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা ফজলুর হক বলেন, গত সরকার তো সব লোক দেখানো কাজ করে টাকা টাকা হাতানোর বন্দবস্ত করছে শুধু।
নেত্রকোণা-ঢাকা রাস্তার অবস্থা দেকে এমনটাই মনে হয়। এতো গানা গানাবাজানার পর এতো বড় রাস্তা হলো অথচ ২ বিভাগের পিড়াপিড়িতে এলাকার মানুষ তার সুফল পাচ্ছে না। দেকে মনে হয় সরকার খামাখা টাকা গচ্চা দিলো। সড়ক ও জনপথের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক জানায়, আমাদের তরফ থেকে সব প্রকৃয়া সম্পন্ন করা হয়েছে এখন রেলওয়ে বিভাগ তাদের মতো করে ডিজাইন করে রেলক্রসিংসহ যাবতীয় কাজ করবে। এ বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী রাজু আহাম্মেদকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসেন বলেন, জন দুর্ভোগের কথা ভেবে পৌরসভার রাস্তাটি করার উদ্যোগ নিয়েছি, ইনশাআল্লাহ জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে এই অঞ্চলের মানুষ রাস্তাটির সুফল ভোগ করবে।
