ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বড়ই চাষে সংসারের অভাব দূর

বড়ই চাষে সংসারের অভাব দূর

মানিকগঞ্জে বড়ই চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন দুলাল হোসেন। মাত্র ২ বিঘা জমি নিয়ে বাগান শুরু করে পরিশ্রমের ফলে এখন তা ১০ বিঘার অধিক বিস্তৃত হয়েছে।

অভাবের সংসারেও এসেছে সচ্ছলতা। দুলাল হোসেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগির ইউনিয়নের উকিয়ারা গ্রামের মেহের আলীর ছেলে। উকিয়ারা চকেই তিনি গড়ে তুলেছেন ৭টি বড়ই বাগান। এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করে কৃষিতে ঝুঁকে পড়েন দুলাল হোসেন। অনেকটা শখের বশে বড়ই চাষ শুরু করলেও সেই শখই এখন পেশায় পরিণত হয়েছে। সংসারের অভাব দূর করে এখন তিনি এলাকার রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন। দুলাল হোসেন দৃঢ় মনোবলকে পুঁজি করে পরিশ্রমের মাধ্যমে মানিকগঞ্জ জেলার মধ্যে সফল ফলচাষি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ২৪ বছরের ব্যবধানে তিনি ১০ বিঘা জমি বাড়িয়েছেন। থাকার জন্য সুন্দর একটি বসতবাড়ি তৈরি করেছেন।

বর্তমানে নিজের ও লিজ নেয়া মিলে ১০ বিঘার অধিক জমিতে বিভিন্ন ফলের চাষ রয়েছে তার।এ বছর তিনি ভারত সুন্দরী, বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি কুলের চাষ করেছেন। ইতিমধ্যেই বরই পাকতে শুরু করেছে। এ বাগান থেকেই পাইকারি দরে ব্যাপারিদের কাছে বড়ই বিক্রি করেন, মানিকগঞ্জ জেলার চাহিদা পূরণ করে এ বড়ই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়।সরেজমিনে দুলালের বরই বাগানে দেখা যায়, মাটির সামান্য ওপর থেকেই সব বড়ই গাছের ডালপালা চারদিক ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রতিটি ডালে প্রচুর পরিমাণে বড়ই ধরে মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। অবস্থাটা এমন যে, পাতার চেয়ে গাছে বড়ই বেশি দেখা যাচ্ছে।বরইগুলা দেখতে ঠিক অস্ট্রেলিয়ান আপেলের মতো। কিন্তু আকারে একটু ছোট। পাখির হাত থেকে বড়ই সুরক্ষিত রাখতে বাগানের উপর নেট জাল দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। ওই মাঠের একটু দূরে পাশাপাশি প্রতিটি বাগানেই রয়েছে একই জাতের বড়ই। প্রতিটি বাগানই আগাছামুক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বাগানের বড়ই দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

স্থানীয় শাহ আলম বলেন, দুলাল হোসেন বরই চাষে চমক দেখিয়েছেন। তাকে দেখে অনেকেই এখন বড়ই বাগান করতে উৎসাহিত হচ্ছে। বড়ই বাগানেই কথা হয় কৃষক দুলালের সাথে। তিনি বলেন, সাংসারিক জীবনে অভাবের তাড়নায় খুব কষ্ট করেছি। কিন্তু বিশ্বাস ছিল পরিশ্রম করেই সফল হব। অর্থ না থাকলেও আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে ২০০০ সালে প্রথমে কিছু ধারদেনার মাধ্যমে দুই বিঘা জমিতে বরই চাষ শুরু করি। সেখান থেকেই শুরু, এখন আমার সাতটি বাগান। অন্যান্য চাষের চেয়ে বরই চাষে লাভ বেশি হওয়ায় জমি বর্গা নিয়ে বরই চাষ বাড়াতে থাকেন তিনি। আর এভাবে ২৪ বছরে বরই চাষের মাধ্যমে সফল হন তিনি। কৃষক দুলাল আরো বলেন, এ পর্যন্ত জীবনে যত ফল ও ফসলের চাষ করেছি প্রায় সবগুলোতেই লাভবান হয়েছি। কিন্তু বেশি সাড়া জাগিয়েছে বল সুন্দরী ও ভারত সুন্দরী জাতের বড়ই। ক্ষেতে যে পরিমাণে বড়ই ধরেছে, তা দেখতে মানুষ আসছে।

অন্য কৃষকরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। গাছের শাখা-প্রশাখায় তারার মতো ধরে আছে বরই। অবস্থাটা এমন যে, পাতার চেয়ে বরই বেশি। আর ১০ থেকে ১২ দিন পরই এসব ক্ষেতের বড়ই বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠবে। কৃষক দুলাল আরো জানান, তার বাগানে মাসিক চুক্তিতে সাত থেকে আটজন লোক সারা বছর কাজ করে। কোনো কোনো সময় বাজারজাতও তারা করেন। তারা অনেক ভালো বলেই বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছে। বিনিময়ে তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলোও নিজের মতো করে দেখেন তিনি। স্ত্রী ও দুই সন্তানও তাকে সহায়তা করেন। এতসব সফলতার মাঝেও দুলালের কষ্ট আছে। ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ২৪ বছর যাবৎ বাগান করছি, আমি জেলার সবচেয়ে বড় এবং সফল চাষি হলেও কৃষি অফিস কখনও কোনো খোঁজখবর অথবা সহায়তা করে না। পুরষ্কার ও সহায়তা দেবার কথা বলে প্রতি বছর কাগজপত্র নিলেও আজ পর্যন্ত কোনো সহায়তা বা পুরষ্কার দেয়নি। দুলাল হোসেনের দেখাদেখি এ অঞ্চলের অনেকে এখন বরই চাষ শুরু করেছেন। তার বাগানে বল সুন্দরী ও ভারত সুন্দরী জাতের বরই সবার নজর কেড়েছে। অতীত ও বর্তমান জীবনের হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে এলাকার মানুষের কাছে দুলাল হোসেন জীবনযুদ্ধে জয়ী সফল এক যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মানিকগঞ্জের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. রবিআহ নূর আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দুলাল হোসেন বড়ই চাষ করে আসছেন। মানিকগঞ্জের মাটি সব ধরনের ফল চাষের জন্য উপযোগী। তিনি একজন অভিজ্ঞ ফল চাষি। শুরু থেকেই কৃষি অফিস তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে এসেছে। এ জেলা রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী হওয়ায় দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়।

আশা করছি, গত বছরের চেয়ে এবার তার বাগানের ফলন আরো ভালো হবে দামও বেশি পাবে। বেকার যুবকরা দুলাল হোসেনকে দেখে কৃষির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত