কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের কেশবপুরে ভয়াবহ বন্যা ও জলাবদ্ধতায় কৃষি জমিতে সার ব্যবহার না হলেও আসন্ন রবি মৌসুমের শুরুতে বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে রাসায়নিক সার। ডিলাররা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে রাতের আধারে বেশি দামে এ সার বিক্রি করে দিচ্ছেন ঘের মালিকদের কাছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, বিসিআইসি সার ডিলার নিয়োগে নীতিমালা উপেক্ষা করে একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তির নামে ডিলারশিপ প্রদান, অধিকাংশ ডিলার পৌর শহরে দেয়া, খুচরা সার বিক্রেতাদের সময় ও প্রয়োজনমতো সার প্রদান না করাসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে পাইকারী সার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। এতে খুচরা সার ব্যবসায়ীদের পরিবহণ খরচ বেশি দিতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ কৃষকদের ওপর।
কৃষি অফিস জানায়, পৌরসভাসহ উপজেলায় ১৩ জন বিসিআইসি ডিলার, ২৬ জন বিএডিসি ও প্রতি ওয়ার্ডে ১ জন করে সরকার অনুমোদিত খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছেন। চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিসিআইসি, বিএডিসি ও আমদানি মিলে পাইকারী সারের ডিলাররা ৩৭৭০ টন ইউরিয়া, ৯০৭ মেট্রিকটন টিএসপি, ২০৫০ মেট্রিক টন ডিএপি ও ৯৬০ মেট্রিক টন এমওপি সার দুই কিস্তিতে উত্তোলন করেন। সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্রতিকেজী ইউরিয়া ২৭ টাকা, টিএসপি ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা ও এমওপি ২০ টাকা কেজী দরে বিক্রি করার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ ক্যামিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ এর ৩.২ উপধারায় উল্লেখ রয়েছে, নিজ মালিকানায় অথবা ভাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদণ্ডপৌরসভায় বিক্রয় কেন্দ্রসহ কমপক্ষে ৫০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গুদামঘর থাকতে হবে। এ নীতিমালা উপেক্ষা করে কেশবপুরে বিসিআইসি সারের ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিসিআইসি ডিলারদের মধ্যে ৫ জনের দোকানসহ বিএডিসি ৮ জন ডিলারের দোকানই পৌর শহরে।
১৩ জন বিসিআইসি ডিলারের ভেতর নামে-বেনামে একই পরিবারে রয়েছেন ১২ জন। এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধার্থে আরো ১৭ জন বিএডিসি ডিলার ও কৃষি বিভাগ প্রতিটি ওয়ার্ডে ১জন করে খুচরা সার বিক্রেতা নিয়োগ দেয়। হিসেব মতে, আমদানি করা মোট সারের অর্ধেক খুচরা ডিলারদের মাধ্যমে গ্রামীণ পর্যায়ে ও বিসিআইসি এবং বিএডিসি ডিলারদের মাধ্যমে বাজার এলাকার কৃষকদের কাছে সরাসরি বিক্রির কথা। কৃষি অফিসের ইস্যুকৃত ডিলারদের নামের বরাদ্দ তালিকায় দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বরাদ্দকৃত সব সার উত্তোলন করা হয়েছে। বিসিআইসি ও বিএডিসি সার ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যেই তারা সার বিক্রি করে থাকেন। তবে কেশবপুরে কৃষকদের কাছে তিউনিশিয়ার ফসফেটের চাহিদা বেশি। যেকারণে বাজারে সবসময় সংকট থাকে বলেই বাইরে থেকে কিনতে হয়। অন্যান্য সারের কোনো সংকট নেই।
খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, প্রায় সকল ডিলারই তাদের বিক্রয় কেন্দ্র ও গুদাম পৌর এলাকায় স্থাপণ করায় খুচরা বিক্রেতাদের পৌর এলাকা থেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে সার নিয়ে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে বিক্রি করতে হয় বলে অতিরিক্ত পরিবহণ খরচ দিতে হয়। এতে সারের গড়মূল্য বৃদ্ধি পায়। আবার ভরা কৃষি মৌসুমে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডিলাররা সার সরবরাহ করেন না। প্রত্যেক বিসিআইসি ডিলারের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে সার মজুদ রেখে বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে অনুমোদিত খুচরা সার বিক্রেতাদের কাছে বিক্রির কথা থাকলেও গত ১৫ বছর ধরে এক ডিলার একাধিক লাইসেন্সের সার উত্তোলন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চড়া দামে বিক্রি করে আসছেন।
সরফাবাদ এলাকার কৃষক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমে তার সব সার মিলে ৩০ বস্তা কিনতে হয়। ৩/৪ মাস বন্যা থাকায় এবার ১ কেজীও সার কিনতে হয়নি। এরপরও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ইউরিয়া ৩০ টাকা, টিএসপি ৩০ টাকা ও এমওপি ২২ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। রাতের আধারে এসব সার চলে যাচ্ছে ঘের মালিকদের কাছে। ঘেরের পাড়ে সার স্তুপ করে রাখা থাকলেও প্রশাসন থাকেন নীরব।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, সাধারণত ঘেরে শতকে ২০০ গ্রাম করে সার ব্যবহারের নীতিমালা থাকলেও ঘের মালিকরা তা না মেনে ১ থেকে দেড় কেজী করে ঘেরে প্রয়োগ করেন। একারণে তাদের চড়া দামে সার কিনতে হয়। এতে সারের সংকট হতে পারে।উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার বলেন, সারের কোনো সংকট নেই।
সার ডিলাদের গুদামে মজুদ রয়েছে। সরকার মরক্কো ও তিউনিশিয়ার টিএসপি আমদানি করে থাকে। দুটিরই গুণগত মান একই হলেও কৃষকদের কাছে তিউনিশিয়ার টিএসপির চাহিদা বেশী। একারণে এসারের সাময়িক সংকট দেখা দিতে পারে। সারের সংকট মোকাবিলায় উপজেলাব্যাপী মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া, ভয়াবহ বন্যার কারণে কৃষিতে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে পূর্বাঞ্চলের কৃষকরা এখনো বোরোর বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। এতে বোরো আবাদ বিলম্বিত হতে পারে। একারণে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে জোর দেয়া হয়েছে।
