সাড়ে ৪০০ বছরের মসজিদে যেতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রুহুল আমিন রুবেল, ঝালকাঠি

সাড়ে ৪০০ বছর পূর্বে শায়েস্তা খানের শাসনামলে নির্মিত প্রাচীন জামে মসজিদে যেতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ পার হতে হয়। মসজিদটির আধুনিকায়ন করা হলেও কয়েক বছর আগে নির্মিত ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এলজিইডির অর্থায়নে নির্মিত এ ব্রিজের নীচের আস্তর খসে পড়ে মরিচা ধরা রড বের হয়ে গেছে। যে কোন সময় ব্রিজ ভেঙে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘনা। ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের নাগপাড়া গ্রামের শিকদার বাড়ির সামনেই নাগপাড়া শিকদার বাড়ি জামে মসজিদ নামে এ প্রাচীনতম মসজিদের অবস্থান।
জনশ্রুতি অনুযায়ী বায়োজ্যষ্ঠ ব্যক্তি ও এলাকাবাসী জানান, বাংলায় মুঘল সম্রাটের আমলে সুবেদার শায়েস্তা খানের শাসনকালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরী মসজিদটি আকার আকৃতিতে ছোট হলেও রয়েছে নান্দনিক কারুকাজ। ছাদের উপরেও বড়সরো একটি মিনার রয়েছে।
প্রাচীনতম মসজিদই যার সাক্ষ্য বহন করে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তি সময়ে মসজিদটি ছিলো পরিত্যক্ত। ভিতরে উই পোকার বড় বড় ডিবি আর লতাপাতায় ঘিরে এক ভূতুরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। ভয়তেও মসজিদের ভিতরে কেউ ঢুকতো না। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পাগল বেশে এক দরবেশ আসেন এলাকায়। তিনি মসজিদটি খুঁজতে থাকেন। মসজিদের কাছে এসে বলে পেয়েছি। ওই দরবেশের বরাত দিয়ে লোকজন জানান, দরবেশ স্বপ্নে মসজিদটি দেখতে পেয়েছেন। মসজিদটি আবাদ করতে তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী খুঁজতে খুঁজতে নাগপাড়া এলাকায় ঢুকেন। স্থানীয়দের সহায়তায় মসজিদের চার পাশে আজান দিয়ে ভেতরের বন-জঙ্গল ও লতাপাতা পরিষ্কার করেন।
এরপরে বালু ছিটিয়ে বিষাক্ত সাপসহ কীটপতঙ্গ দূর করেন। সর্বপ্রথম তার ইমামতিতেই ওখানে নামাজ আদায় হয়। প্রথমদিকে বেশ কয়েকবছর তার ইমামতিতেই চলে নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগীর কাজ। এরপর এলাকাবাসীর সক্রিয়তায় মসজিদটি প্রাণ ফিরে পায়। বাড়তে থাকে মসজিদে মুসল্লির সংখ্যাও। মসজিদ পরিচালনার জন্য স্থানীয় লোকজনের দান-অনুদান এবং বাইর থেকেও অনুদান সংগ্রহ করে মূল মসজিদটিকে মেহরাব হিসেবে রেখে মসজিদের সামনে সম্প্রসারণের কাজ করা হয়। মসজিদের পাশে স্থানীয় শিশু-কিশোরদের কোরআন শিক্ষার জন্য মক্তব চালু রয়েছে। সামনের ময়দানের ঈদের নামাজ ও জানাজা নামাজ আদায় করা হয়। মুসল্লিরা আরো জানান, মসজিদ সংলগ্ন বাড়িতে খুবই কম সংখ্যক লোকের বসবাস। মুসল্লিদের অধিকাংশই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন। মসজিদে ঢুকতেই একটি ব্রিজ পার হতে হয়। সেই ব্রিজের নীচের আস্তর খসে খসে পড়ে মরিচা ধরা রড বের হয়ে গেছে। যে কোন সময় ব্রিজ ধসে প্রাণহানিসহ ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এমন ঝুঁকি নিয়েই এলাকার লোকজন মসজিদে নামাজ পড়তে যাতায়াত করে।
