শীতের পিঠা বিক্রি জমে উঠেছে
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রুহুল আমিন রুবেল, ঝালকাঠি

ঝালকাঠি জেলা শহরসহ উপজেলা ও প্রত্যন্ত এলাকার বাজারগুলোর ফুটপাতে বসেছে শীতকালীন পিঠা বিক্রির পসরা। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে বেশ রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে। চিতই পিঠা, ভাপা পিঠাসহ নানান পদের পিঠা বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের এ দোকানগুলোতে। তবে চিতই বা স্থানীয় ভাষায় কাঁচিখোঁচা পিঠার বিক্রিই বেশি। শহরের পুরাতন স্টেডিয়াম এলাকার পিঠা বিক্রেতা মজিবুর রহমান (৫৫) জানান, প্রতিদিন ১২থেকে ১৩কেজি চালের পিঠা বিক্রি করেন তিনি। পিঠার সাথে শুঁটকি, মরিচ, শর্ষে ভর্তা ও গুড়-নারকেলের মিঠা দেয়া হয়।
ভর্তাগুলো বিনামূল্যে দেয়া হলেও নারকেল-মিঠা পিঠা প্রতি দশ টাকা করে নেয়া হয়। আর প্রতিটি চিতই পিঠার জন্য নেয়া হয় ৫টাকা করে। পিঠা বিক্রি করে প্রতিদিন তার বেশ উপার্জন হয়। প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হচ্ছে, পুরো শীতের মৌসুমে তার আয় ভালোই হবে বলে জানান মজিবুর রহমান। শুধু ঝালকাঠিতেই না, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়াতেও শীতের আমেজ শুরু হতেই অলিগলি, পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি পিঠা ব্যবসায়ীরা। বাহারি সব পিঠাপুলি নজর কাড়ছে পিঠাপ্রেমিদের। পড়ন্ত বিকেল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা হয়ে বেশ রাত পর্যন্ত পিঠাপুলির দোকানগুলোতে বিক্রির ধুম পড়ে। সন্ধ্যার পর থেকেই উপজেলায় জনবহুল অলিগলি ও রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে দাঁড়িয়ে বা বসে লাইন দিয়ে পিঠা খেতে দেখা যায় অনেককেই। শীত মৌসুমে প্রতিটি বাড়িতে পিঠাপুলি বানানোর অয়োজন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। কিন্তু সময়ের পবিবর্তনে ঘরে ঘরে পিঠাপুলি তৈরির আয়োজন এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। ব্যস্ততা ও পারিপার্শ্বিক সমস্যায় নিজ হাতে পিঠাপুলি তৈরির আয়োজন কমে গেলেও পিঠাপ্রীতি ও ভোজন থেমে নেই। পিঠা প্রেমীরা এখন দোকানের পিঠার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। বাড়িতে পিঠা বানানোর ঝামেলা এড়াতে অনেকেই দোকান থেকে পিঠা ক্রয় করে স্বাদ মেটাচ্ছেন। আর এ পিঠা বিক্রি করেই জীবিকা চালাচ্ছেন অনেকে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চুলার অল্প আঁচে ধোঁয়া উঠছে। তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু চিতই, ভাপাসহ অন্যান্য পিঠা। আর চুলা থেকে নামানোর পর মুহূর্তেই তা চলে যাচ্ছে অপেক্ষমাণ ক্রেতার হাতে।
দোকানে ভাপা ও চিতই পিঠা পাওয়া যায়। চিতই পিঠার সঙ্গে সরিষা ভর্তা, মরিচ ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা ও ধনিয়াপাতা ভর্তা দেওয়া হয়। ভাপা পিঠা ১০টাকা, চিতই পিঠা ৫ টাকায় বিক্রি হয়। ক্রেতারা রাস্তর পাশে দোকানে কাছে দাড়িয়ে অথবা বসে সেই পিঠা খাচ্ছেন। কেউবা নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের জন্য। রাজাপুর শহরের বাইপাস মোড়ের পিঠা বিক্রেতা মো. আব্দুস সালাম বলেন, বছরের এই সময়টা শীতকালীন পিঠা বিক্রি বেশি হয়। বর্তমানে চিতই ও ভাপা পিঠা তৈরি করছি। আর চিতই ও ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য থাকছে অনেক পদের ভর্তা। আর এই ব্যবসায় আগে ভালো লাভ পাওয়া গেলেও এখন সবকিছুর দাম অতিরিক্ত হওয়ায় লাভ তেমন নেই।
তবে যা উপার্জন হয়, তাতেও একেবারে কম না। চিতই পিঠা খেতে আসা পাশের একটি বাস কাউন্টারের পরিচালক মো. রায়হান বলেন, শীতে চুলার পাশে বসে পিঠা খাওয়ার যে ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, এখন তার দেখা পাওয়া সম্ভব নয়। রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি হওয়ার কারণে পিঠা খাওয়ার একটু সুযোগ পাওয়া যায়। রাজাপুর উপজেলার বাঘরি বাজারের পিঠা বিক্রেতা মো. পান্নু হাওলাদার বলেন, আগে প্যাডেল চালিত রিকশা চালাতাম। পাঁচ বছর ধরে এখানে পিঠা বিক্রি করছি। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ পিস পিঠা বিক্রি হয়। সব খরচ বাদে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ টাকা লাভ হয়। এতেই সংসার চলে।
