চিকিৎসকসহ নানা সংকটে জর্জরিত হাসপাতাল
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কাজী বাবলা, পাবনা

প্রসূতি সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত পাবনা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি (হাসপাতাল) একজন অস্থায়ী চিকিৎসক ও কিছু অস্থায়ী জনবল দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রসূতি মা ও শিশুরা। সরেজমিন জানা গেছে, পাবনার শহরের গোবিন্দা এলাকায় দরিদ্রদের চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে ব্রিটিশ আমলে পাবনা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি (হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের অধীনে আসে হাসপাতালটি। ১০ বেড নিয়ে শুরু হওয়া হাসপাতাল পরে ৩০ বেডে উন্নীত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দু’একবার অবকাঠামোগত সংস্কার হলেও নতুন বরাদ্দে কোনো সম্প্রসারণ হয়নি। এক সময় এ হাসপাতালে মাসে প্রায় ৩০০টি রোগীর নরমাল ডেলিভারি হলেও বর্তমানে চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে কমে গেছে। চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ ছিল সিজার। ব্যাহত হয়েছে নরমাল ডেলিভারিও। অতিরিক্ত দায়িত্বে একজন চিকিৎসক আসার পর বর্তমানে মাসে ৫০-৬০টি নরমাল ও ২-৩টি সিজারিয়ান ডেলিভারি হচ্ছে।
পাবনা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের (হাসপাতাল) একটি সুত্র জানায়, এখানে অনুমোদিত স্থায়ী পদের সংখ্যা ৭টি। এর মধ্যে প্রহরী, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপত্তাকর্মীর পদ ৩টি। বাকি ৪টি পদের মধ্যে একজন করে মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক), ফিমেল মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও সহকারী নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট পদ রয়েছে। তবে এ সব পদের একটিতেও স্থায়ী লোকবল নেই। মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) পদে একজন চিকিৎসক অতিরিক্ত দায়িত্বে চিকিৎসা দিচ্ছেন এখানে। এছাড়া ব্যথামুক্ত ডেলিভারির জন্য স্থায়ীভাবে নেই অ্যানেস্থেশিয়া চিকিৎসকের পদ। ৮-১০ ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও প্রসূতি সেবায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা আল্ট্রাসনোগ্রামের জন্য মেশিন ও জনবল নেই।
মা ও শিশু হাসপাতালে মাত্র একজন চিকিৎসকের পক্ষে মাকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলেও শিশুর চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ডেলিভারির পর শিশুদের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ সব পদ তৈরির পাশাপাশি সার্বিক সেবার মান বাড়াতে আয়া ও নার্সসহ বেশ সংখ্যক জনবল বৃদ্ধির দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গোবিন্দা এলাকার বাসিন্দা মাফুজ আলম জানান, প্রতি সপ্তাহে দু’দিন এখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। ডাক্তার কম থাকায় সঠিকভাবে রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না। ওষুধ সরবরাহের পরিমাণও খুবই কম।
অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকেই কিনতে হয়। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য ক্লিনিকে গেলে সিজারের প্রবণতা বেশি থাকলেও এখানে নরমাল ডেলিভারিকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এ জন্য প্রসূতি এখানে বেশি আসেন। চর সাধুপাড়া থেকে স্ত্রী ফেরদৌসী খাতুনের ডেলিভারি করাতে আসা স্বামী বাবুল হোসেন বলেন, এখানে মাত্র একজন ডাক্তার, আয়া দু’একজন। নার্সও কম। যার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সমস্যা আছে। রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন কোনোমতে। ডাক্তারসহ দরকারি আয়া নার্স থাকলে এ সেবা আরো ভালো হতো।
গোবিন্দার স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন বাবর বলেন, আমি এই হাসপাতালে জন্ম নিয়েছি। আমার জন্মের পর হাসপাতালটির যে অবস্থা ছিল এখনো ঠিক সেই অবস্থাই আছে। একজন মাত্র ডাক্তার। তিনিও কখনো কখনো থাকেন না। তখন রোগীরা অন্য ক্লিনিকে যায়। ফলে অযথা সিজারের শিকার হয়, রোগীদের ব্যয় বাড়ে। কর্তৃপক্ষের উচিত হাসপাতালটির দিকে নজর দেয়া।
জনবল বাড়ানোসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নও প্রয়োজন। পাবনা মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের (হাসপাতাল) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) উর্মি সাহা জানান, নার্স, আয়া ও চিকিৎসক থেকে শুরু করে সবখানেই আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দের মাধ্যমে রোগীদের সর্বোচ্চ মানের সেবা দেয়া সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যেই আমরা প্রসূতি ও শিশুর সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
এখানে মা ও শিশুদের সেবা দেয়ার কথা।
কিন্তু মায়ের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে পারলেও শিশুর তেমন সেবা আমাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হয় না। কারণ এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। ফলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাচ্চার কোনো সমস্যা হলে বাইরে পাঠাতে হয়। এছাড়া নরমাল ডেলিভারি এখানে ব্যাপক হয়। নরমাল ডেলিভারিতে ব্যথার জন্য গর্ভবতীদের ভয় বেশি। এক্ষেত্রে একজন অ্যানেস্থেশিয়া চিকিৎসক হলে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি সম্ভব। এছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট ও জনবল বরাদ্দসহ হাসপাতাল সম্প্রসারণ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
