জাল দিয়ে ঘিরে রাখা বাগানগুলোয় থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল সবুজ বরই। চাষিদের কেউ গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত; কেউ সংগ্রহ করছেন ফল। বাগানে উঁকি দিচ্ছে পাখিরা। কাঁচা-পাকা বরই কিনতে ক্রেতারা আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে। এই বরই তাজা ও স্বাদ ভালো হওয়ায় চাহিদা বেশি, বিক্রি করতে বেশি সময় লাগে না।’ অল্প পুঁজি ও ঝুঁকি কম থাকায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বরই চাষ করে অনেকেই সফলতা পেয়েছেন। বরইয়ের বাম্পার ফলনে খরচের চেয়ে লাভের পরিমাণ দুই থেকে তিন গুণ।
বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে বিদেশি জাতের বরই চাষ। অল্প সময়ে ভালো ফলন আর দাম পেয়ে খুশি উদ্যোক্তারা। বরই চাষ করে রীতিমতো সাড়াও ফেলেছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তারা। বেশিরভাগ অনাবাদি জমিগুলোতে এখন সারি সারি বরই গাছ। গাছগুলোতে থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে নানা জাতের বরই। সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে বল সুন্দরী ও আপেল কুল। বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে বল সুন্দরী, আপেল কুল, কাশ্মীরি, ইন্ডিয়ান সুন্দরী, বাউফুল, অস্ট্রালিয়েড বিভিন্ন জাতের বরই চাষ হলেও টককুল জাতের বরই চাষ হয়নি। তবে এ মৌসুমে বাণিজ্যিক বরই চাষাবাদ করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের তরুণ উদ্যোক্তা সামসুল আল আমিন। তার সফলতা দেখে অনেকেই বরই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলার মানিক পোটল আইডিয়াল অ্যাগ্রো ফার্মে কৃষক সামসুল আল আমিন চোখ জুড়ানো বরই বাগান গড়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রতিদিন তার বাগানে কাজ করছে ৮-১০ জন শ্রমিক। বরই গাছগুলো পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা। বরই গাছগুলো রং বেরংয়ের বরইয়ের ভাড়ে নুইয়ে পড়ছে। দেশিও টককুল জাতের বরই এগুলোর আকৃতি বল সুন্দরী, আপেল কুল, কাশ্মীরি, ইন্ডিয়ান সুন্দরী, বাউফুল, অস্ট্রালিয়েড বিভিন্ন জাতের বরইয়ের থেকে হালকা ছোট হয়। কিন্তু ফলনের দিক থেকে এটা বেশি হয় বলে পাতার দ্বিগুণ ফল ঝুলছে প্রতিটি গাছে। প্রায় ১৩ বিঘা জমি নিয়ে সামসুল আল আমিনের এ বাগান।
এখানে ৩ বিঘা জমিতে আগাম টককুলসহ বল সুন্দরী, আপেল কুল, বাউকুল বরই চাষ করা হয়েছে। ২ বিঘা জমিতে মালটা, ৫০ শতকে স্ট্রবেরি, ৪০ শতকে ড্রাগন সহ আরও বিভিন্ন জাতের বরই চাষ করেছে। গাছ ভর্তি আপেলের মত লাল বরই দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। বরই বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন দেখতে আসছে। কেউ কেউ শখ করেই যেন বাগান হতে বরই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সামসুল আল আমিন তার বাগানে বেশির ভাগ দেশীয় জাতের টককুল বরই সহ অন্যান্য জাতের বরইও পরীক্ষামূলক চাষ করেছেন।
বরই গাছের চারা লাগানোর দুই বছরের মধ্যেই গাছে ফুল এসেছে। এখন ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। এ বরই দেখতে সুন্দর, খেতেও টক ঝালে অন্যরকম সুস্বাদু। বাজারে রয়েছে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা। তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশে বেকারত্ব দূর করতে কৃষিসহ বিভিন্ন আবাদি জমিতে উন্নত মানের বাগান করে তাতে পরিচর্যা করে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। বরই চাষ সম্প্রসারণে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানালেন কৃষি কর্মকর্তা। নতুন জাতের এসব বরই আগামীতে অর্থকরী ফসল হিসেবে বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।