ঢাকা ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নকশি কাঁথায় ভাগ্যবদল

নকশি কাঁথায় ভাগ্যবদল

প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তারা। তীব্র ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম ও কর্মনিষ্ঠার ওপর ভর করে নকশি কাঁথা সেলাই করে ঘুরে দাঁড়ালেন। নিজ গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় নারীদের নকশি কাঁথা তৈরি করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তৈরি করছেন অন্যদের জন্য আয়ের পথ। তাইতো এখন সবার কাছেই দৃষ্টান্ত। ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের নারী উদ্যোক্তা আমেনা খানম। ২০০৯ সালে তার বিয়ে হয়। স্বপ্ন দেখতেন স্বামীকে নিয়ে সুন্দর একটি সংসার করে জীবন পার করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় ২০১৮ সালে।

স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পরে এক রকম মানসিকভাবে ভেঙে পরে আমেনা খানম। তারপরেও নিজের সন্তানের পড়াশোনা খরচ ও পরিবারে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা আনতে খুঁজতে হয় বিকল্প আয়ের পথ। ছোটবেলা থেকে কাঁথা তৈরির কাজ জানতেন আমেনা। পরিবারের এক আত্মীয়র কাছ থেকে প্রথম কাঁথা তৈরির কাজ পায় আমেনা। দীর্ঘ সাত মাস ধরে নিপুণ হাতের নকশী করে কাঁথা তৈরি করে বুঝিয়ে দেন। এর বিনিময়ে তিনি ৩ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পান। এই কাজের মাধ্যমে মানসিকভাবে উজ্জীবিত হয়ে কাজের আগ্রহী হন। ফলে বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঁথার তৈরির কাজ আসতে থাকে তার কাছে। এর মাধ্যমে আয় বাড়তে থাকে আমেনার। বর্তমানে আমেনার ইউনিক নকশী হাউজ প্রায় ৩৫ জন মহিলা কাজ করে থাকেন। সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে তার ইউনিক নকশী হাউজ র্ব্যান্ডে রূপান্তর করা যাবে বলে জানান তিনি। আমেনা খানম বলেন, বর্তমানে আশেপাশের নারীরা বাড়িতে কাজের অবসর সময়ে কাঁথা তৈরি ও কাজ শিখতে ছুটে আসেন। নিজের তৈরি করা বাহারি ধরনের সব ডিজাইনের কাঁথা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন তিনি।

কাঁথার মাধ্যমে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্য নারীদের করছেন বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা। বর্তমানে আমেনা খানম কাঁথা বিক্রি করে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। নকশি কাঁথার ব্যবসা করে সব অভাব দূর করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বর্তমানে বাবার সংসারে এক সন্তান নিয়ে ভালোই আছেন আমেনা। ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি। আমিনা খানম বলেন, আমার তৈরি কাঁথাগুলো একদম ইউনিক ডিজাইনের।

আমার কাঁথার ডিজাইন কোনো অনলাইনে পাওয়া যায় না। আমার কাঁথাগুলো সমপূর্ণ হাতের কাজের সেলাই করা। বর্তমানে ইপির মাধ্যমে অনলাইনেও আমার তৈরি নকশি কাঁথার ব্যাপকহারে অর্ডার পাচ্ছি। আর সেলাই করা বড় কাঁথাগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর ছোট কাঁথা ১ হাজার থেকে শুরু করে ২৫শ, ৩ হাজার, সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এখন ব্যবসার পরিধি বড় করার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই পেশার মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করা সম্ভব হবে। এ সব উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ঘরে বসে থাকা নারীরাও কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে নিজেদের গড়ে তুলছে স্বাবলম্বী হিসেবে। স্থানীয় নারী কুলসুম বলেন, পরিবারকে সময় দেয়ার পাশাপাশি আমি আমেনা আপার কাছে এসে কাঁথা সেলাই কাজ করি। সেলাই করে যে টাকা পাই তা দিয়ে আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হই। এই অর্থ দিয়ে সংসারের বাড়তি খরচ মিটাই।

মিনারা নামে এক স্কুলছাত্রী বলেন, পড়াশুনার পাশাপাশি অবসর সময়টা হাতে সেলাইয়ের কাজ করি। কাজের পরিমাপ অনুযায়ী টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে আমি আমার হাত খরচ চালাই। প্রাইভেট টিউশনির ফি দেই। পরিবারেকও দেই। স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা লিমা রহমান জানান, আমেনা আপার কাঁথাগুলো ব্যতিক্রমী ডিজাইনের। তার কাঁথাগুলো ইউনিক। সবাই পছন্দ করে। অন্যান্য কাঁথার তুলনায় আমেনা আপুর কাঁথার মান খুবই ভালো। এটা আমরা যাচাই করে দেখেছি। পাশাপাশি আমরা ইপির মাধ্যমে আমেনা আপার তৈরি করা কাঁথাগুলো অনলাইন প্ল্যাটর্ফমের মাধ্যমে বিক্রি করতে সহযোগিতা করে থাকি।

এদিকে নারীদের স্বাবলম্বী করার এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে জেলা মহিলা বিষয় অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, আমিনা খানমের মত যেসব নারী উদ্যোক্তারা রয়েছেন, যারা নিজেরা কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করে তাদের পাশে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর সব সময় রয়েছে।

তাদের জন্য সব ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও আর্থিক সহযোগিতারা জন্য বিআরডিবি, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকসহ যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়ে থাকে তাদের সঙ্গে সংযোগ করে দিবো। যেন সহজ শর্তে ঋণ পেয়ে ব্যবসার কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত