ঢাকা ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিদেশে যাচ্ছে কুষ্টিয়ার মাটির পণ্য

বিদেশে যাচ্ছে কুষ্টিয়ার মাটির পণ্য

প্লস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যসামগ্রীর দাপটেও কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির তৈরি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। তবে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মূলধনের অভাবে চাহিদামতো পণ্য সরবরাহ করতে পারা যাচ্ছে না। রয়েছে পুঁজির সংকট। কল্যাণপুর গ্রামের ৪০ জন সদস্য মিলে গড়ে তুলেছেন সমিতি। সরেজমিন দেখা যায়, ৫০-৬০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক পণ্য উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মাটি আর পানি দিয়ে কাদা তৈরি আর কেউ থালা, বাটি ও গ্লাস তৈরি করছেন। আবার কেউ শুকানোর পর তা যত্নসহকারে পরিষ্কার করছেন। সমিতির ব্যবস্থাপক রাজকুমার বলেন, ‘এ শিল্পের ঐতিহ্য খুবই সমৃদ্ধিশালী। একসময় ঘরে ঘরে হাঁড়িপাতিল থেকে গৃহস্থালি সব কাজে ব্যাপকহারে ব্যবহার হতো মৃৎশিল্পের নানা তৈজসপত্র। আমরা এখানে মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করি। চৈতালি দাস নামে এক কর্মী জানান, মাত্র ৩ হাজার টাকা মাসিক বেতনে প্রায় তিন বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। স্বামী মারা গেছেন। একটি মেয়ে আছে। তাই কোনো উপায় না পেয়ে সংসার চালাতে এ কাজ বেছে নিয়েছেন। শিল্পী নামের আরেক শ্রমিক বলেন, এখানে কাজ করে মাস শেষে যে বেতন দেয় তার তিন ভাগের এক ভাগ যাতায়াতেই খরচ হয়ে যায়। টানাটানির মধ্যে সংসার চালাতে হয়।

সমিতির পরিচালক বটোকৃষ্ণ পাল জানান, বর্তমানে বহির্বিশ্বে এ শিল্পের বেশ চাহিদা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে এ শিল্পের অনেক চাহিদা তৈরি হয়েছে। মফিজুল ইসলাম নামে ঢাকার একজন ব্যবসায়ী এখান থেকে পণ্য নিয়ে কাতারে রপ্তানি করেন। হাসান নামে আরেকজন ব্যবসায়ী রপ্তানি করেন সৌদি আরবে। অন্য দুই ব্যবসায়ী এখানকার পণ্য নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান। তবে গতানুগতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এ শিল্প বেশি দিন ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন দরকার আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। তিনি বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন দরকার আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। কিন্তু প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে তাদের পক্ষে এ সব আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে চাহিদা মোতাবেক পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। বারবার আবেদন নিবেদন জানানোর পরও সমবায় অধিদপ্তর কিংবা সরকারি কোনো দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যাচ্ছে না।

মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনতে আসা আব্দুল লতিফ বলেন, মৃৎশিল্প বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। তবে এখন সেসব পণ্য নেই বললেই চলে। তাই কিছু পণ্য কিনতে এসেছি। কুষ্টিয়া জেলা সমবায় অফিসার আনিছুর রহমান বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের ব্যবহার কমে গেছে অনেকাংশে। এ শিল্পের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী।

তবে আশার কথা কুষ্টিয়ার তৈরি মাটির তৈরি এ সব জিনিসপত্র আবারো নতুন করে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। তিনি জানান, এই শিল্পের উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিতে একটি প্রকল্প ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে তা এখনো অনুমোদন হয়নি। আশা করছি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই মৃৎশিল্পের হারানো গৌরব ফিরে পাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত