টানা বৃষ্টিতে যশোর-খুলনা মহাসড়কে ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  যশোর প্রতিনিধি

টানা কয়েক সপ্তাহের বিরামহীন বৃষ্টিতে যশোর-খুলনা মহাসড়কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে মিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি অধিকাংশ রাস্তা ভেঙেচুরে খানাখন্দে পরিণত হয়ে তা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ফলে মহাসড়কে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যে কারণে স্থবিরতা নেমে এসেছে যশোরের বেনাপোল, নওয়াপাড়া, বাগেরহাটের মোংলা এবং সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যে। অতি বৃষ্টিতে এরইমধ্যে জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

বৃষ্টির মধ্যে ভারী যানবাহন চলাচলে অধিকাংশ রাস্তা এখন খানাখন্দক। কোনো কোনো রাস্তায় জমে আছে হাঁটুসমান পানি। আবার কোথাও লম্বা জায়গা জুড়ে কাঁদা। এমন রাস্তায় চলার সময় ভেঙে পড়ছে গাড়ি, নষ্ট হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। ঝুঁকির মধ্যে চলছে যানবাহন ও মানুষ। যশোর-খুলনা মহাসড়কের বসুন্দিয়া থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রাস্তা আগে থেকেই ভাঙাচোরার কারণে চলাচলের অনুপযোগী ছিল।

তার উপরে টানা বৃষ্টিতে ওই মহাসড়কটি এখন মরণফাঁদ। এ মহাসড়ক দেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়ক। এটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোরের নওয়াপাড়া নদীবন্দর, মোংলা বন্দর এবং ভোমরা স্থলবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান রুট। রাস্তা ভেঙে যান চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য।

বন্দর ও শিল্প নগরী নওয়াপাড়ার পাঁচকবর এলাকার ট্রাক চালক ইয়াসিন আলী বলেন, অনেক গাড়ির এক্সেল ভেঙে আটকে যাচ্ছে। গাড়ি উল্টে পড়ে যাচ্ছে রাস্তার পাশে। প্রতিদিন বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সড়কে ট্রিপ নিলে জ্যামে দুই-তিন দিন পর্যন্ত আটকে থাকতে হয়।

নাফকোর সেলস ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, নওয়াপাড়া নদী বন্দরের মাধ্যমে দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ আমদানিকৃত সার খালাস করে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। যশোর-খুলনা মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে ভরা মৌসুমে সার সরবরাহ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থলবন্দর বেনাপোলের রাস্তা ঘাটের অবস্থাও বেগতিক। ভেঙে পড়েছে সেখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাও। এ কারণে বেনাপোল কাস্টমস, বন্দর, রেলওয়ে ও পৌরসভার কার্যক্রম নানামুখি ঝুঁকিতে পড়েছে। স্থলবন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানিয়েছেন, এসব সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হলে সময় লাগবে কমপক্ষে দু’বছর। এদিকে শহরের মণিহার-মুড়লী, দড়াটানা-চাঁচড়া চেকপোস্ট ও দড়াটানা-পালবাড়ি ছাড়া অন্যান্য সব সড়কের অবস্থা নাজুক। বিশেষ করে বাইলেনগুলো ভেঙেচুরে আর পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

যশোর শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবু ফয়সাল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ, রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের সময় গুণগত মান বজায় রাখা ও রাস্তার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা জরুরি।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, যশোর-খুলনা মহাসড়ক সংস্কারে এরইমধ্যে সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কে ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মুড়লি এবং চেঙ্গুটিয়াসহ বেশি খারাপ জায়গায়গুলোতে প্রায় দেড় কিলোমিটার মহাসড়কে ঢালাইয়ের কাজ চলছে।

এটা অগ্রাধিকারভিত্তিতে করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যশোর-খুলনা মহাসড়কের বেশ কয়েকটি অংশে মাটির গুণাগুণ খুবই খারাপ। একই সঙ্গে যানবাহনগুলো অস্বাভাবিক ওভারলোড নিয়ে চলাচলের কারণে দ্রুত নষ্ট হয়ে গেছে বা যাচ্ছে। বর্তমানে বুয়েটের পরামর্শে ঢালাই রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। ঢালাই রাস্তা করা হবে আরও ৮ কিলোমিটার টেন্ডার হয়েছে। সব কাজ শেষ হতে আরও দেড় বছর লাগতে পারে বলে উল্লেখ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া।