দুধ বিক্রেতা থেকে সফল উদ্যোক্তা পটুয়াখালীর মিজান

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এমকে রানা, পটুয়াখালী

পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের গাবুয়া গ্রামের এক সময়ের দুধ বিক্রেতা মিজান এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। কখনও কি ভেবেছিলেন, প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করা দুধই একদিন তার ভাগ্য বদলে দেবে? এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সংগ্রামের পথ পেরিয়ে, স্বপ্ন আর সংকল্পের শক্তি নিয়ে তিনি আজ নিজ গ্রামের মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস।

মিজান গাবুয়া গ্রামের মো. হানিফ হাওলাদারের ছেলে। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা ছিল তার শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় বাধা। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখলেও, জীবিকার চাপে থেমে যেতে হয় পড়ালেখা। শুরু হয় বাস্তব জীবনের কঠিন অধ্যায়।

২০০৬ সালে জীবন ধারণের তাগিদে মিজান হাতে নেন এক ছোট্ট উদ্যোগ- বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরুর দুধ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুরু হতো দুধ সংগ্রহের কাজ। কিন্তু পরিশ্রমের বিনিময়ে আয় ছিল অতি সামান্য। দিনের শেষে হাতে থাকতো কিছু টাকা আর বুকভরা হাহাকার। তবুও হার মানেননি মিজান। সময় গড়াতে থাকে, গড়াতে থাকে তার অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাসও। ২০১৯ সালে এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন তিনি- নিজের একটি খামার গড়ার। মাত্র দুটি অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরু নিয়ে যাত্রা শুরু করেন নিজের স্বপ্নপূরণের পথে। শুরু হয় আরেক অধ্যায়।

মিজান বলেন, অনেকেই বলেছিল, গরু পুষে চলা যাবে না। কিন্তু আমি ঠিক করেছিলাম, ছোট করে হলেও শুরু করব। সফলতা একদিন আসবেই।

কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠায় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার খামারের পরিসর। বাড়তে থাকে গরুর সংখ্যা, বাড়ে দুধের উৎপাদন। কিন্তু তখনই আসে নতুন চ্যালেঞ্জ- দুধ বিক্রি করে ঠিকমতো লাভ হচ্ছে না। বাজারে মিলছিল না ন্যায্য দাম। সেই সময় নতুন করে ভাবতে শুরু করেন মিজান। দুধ দিয়ে অন্য কিছু করা যায় কি না, খুঁজতে থাকেন নতুন পথ। এরপরই মাথায় আসে এক নতুন ভাবনা- দুধ দিয়ে তৈরি করবেন মিষ্টি।

শুরু হয় তার নতুন উদ্যোগ, ছোট পরিসরে। প্রথমদিকে স্থানীয় বাজারে পরিচিতজনদের কাছে বিক্রি করতেন মিষ্টি। গুণগত মান আর সুমিষ্ট স্বাদের জন্য অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার মিষ্টান্ন। বর্তমানে তার তৈরি মিষ্টি প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো। মাস শেষে আয় দাঁড়ায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।

মিষ্টি খেতে আসা সালাউদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, মিজানের মিষ্টির স্বাদ একদম ঘরোয়া, খাঁটি দুধ আর ভালো মানের উপকরণ ব্যবহার করেন বলেই মানুষ বিশ্বাস করে তার পণ্যে। এখন অন্য জায়গা থেকেও অনেকে অর্ডার করে।

গ্রামের যে ছেলেটি এক সময় দুধ নিয়ে বাজারে ঘুরে বেড়াতেন, আজ তিনি নিজেই একজন সফল ব্যবসায়ী। তার খামারে এখন আরও কয়েকজন কাজ করছেন, যা তৈরি করেছে নতুন কর্মসংস্থান।

মিজান আরও বলেন, আমি শুধু নিজের জন্যই না, গ্রামের জন্যও কিছু করতে চাই। যুবকদের বলব- স্বপ্ন দেখ, চেষ্টা কর। কখনও হাল ছেড়ো না।

আজকের দিনে যখন অনেকে কাজের অভাবে হতাশ, তখন মিজান প্রমাণ করেছেন- উদ্যম আর সংকল্প থাকলে একজোড়া হাত দিয়েই গড়া যায় সাফল্যের সাম্রাজ্য। জীবনের চাকা ঘোরাতে প্রয়োজন শুধু সাহসের প্রথম ধাপটি নেওয়া। মিজান তাই শুধু একজন উদ্যোক্তা নন, বরং হাজার তরুণের অনুপ্রেরণার নাম।