কেশবপুরের খাদ্য সংকটে কালোমুখ হনুমান
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

ব্রিটিশ আমল থেকে যশোরের কেশবপুর উপজেলা হনুমান পল্লী হিসেবে পরিচিত। দেশের কোথাও এদের সেভাবে দেখা না গেলেও কেশবপুর শহর ও এর আশপাশে এখনো প্রায় পাঁচ শতাধিক কালো মুখো হনুমানের বসবাস রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত খাবার ও অভয়ারণ্যের অভাবে শ্রীরামচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ অনুচর এককালের গ্রেট মাঙ্কি বলে খ্যাত হনুমান এখন বিলুপ্তের পথে। জানা যায়, উপজেলা পশু হাসপাতাল, বক্ষকাটি, রামচন্দ্রপুর, বালিয়াডাঙ্গা, মধ্যকূল ও ভোগতী গ্রামে এদের বেশি বিচরণ। পৃথিবীর একমাত্র বাংলাদেশের কেশবপুরে ও ভারতের নদীয়া জেলাতে এ কালো মুখ ভবঘুরে হনুমানের বসবাস। সরকারের তরফ থেকে এদের খাবার দাবারের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত অপ্রতুল। তাই তাদের জীবন-জীবিকার জন্য খাবারের তাগিদে এদিক-সেদিক ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। বর্তমানে তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণহয়ে উঠেছে। হনুমানের প্রজনন আর গর্ভকালীন নিরাপত্তার জন্য নেই প্রয়োজনীয় বনাঞ্চল। আবার চাহিদা অনুযায়ী খাবার না পেয়ে তারা ক্রমেই হিংস্র হয়ে উঠছে।
কথা বলতে না পারলেও এ কালো মুখ হনুমানদের অনুভূতি শক্তি প্রায় মানুষের কাছাকাছি। তাই কেশবপুরের মানুষের সঙ্গে রয়েছে এদের সখ্যভাব। এরা মানুষের কাছ থেকে বাদাম, কলা, রুটি ইত্যাদি নিয়ে খায়। এছাড়াও এরা মানুষকে বিভিন্নভাবে বিনোদন দেয়। আবার কখনও কখনও মানুষের দ্বারা উত্ত্যক্ত হয়ে হিংস্র হয়ে ওঠে। এ কালো মুখ হনুমান সাধারণত লম্বায় ২৪-৩০ ইঞ্চি এবং উচ্চতায় ১২-২০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। কালো মুখ প্রজাতির এসব হনুমান ৫ বছর বয়স থেকে ৬ মাস অন্তর বাচ্চা প্রসব করে। এদের গড় আয়ু ২০-২৫ বছর। শারীরিক ওজন ৫-২৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। মুখের ন্যায় হাত ও পায়ের পাতা কালো। চলাফেরার সময় এরা লেজ উঁচু করে চলে। গাছের ডালে বসলে এরা আবার লেজটাকে ঝুলিয়ে দেয়। পেঁপে, আম, কলা, সফেদা, মুলা, আলু, বেগুন, পাউরুটি, শাকসবজি, কচিপাতা, বিস্কুট, বাদাম ইত্যাদি এদের প্রিয় খাবার। স্থানীয়রা জানায়, বড়ই স্পর্শকাতর প্রাণী কালো মুখ হনুমান। এদেরও রয়েছে মানুষের মতো বুদ্ধি, রাগ-অভিমান কিংবা অভিযোগ। তাদের কেউ কিছু বললে তারা দলবদ্ধভাবে থানায় গিয়ে সেটার অনুভূতি জানায়। এমন কি তারা বিচারের দাবিও জানায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিরল প্রজাতির এই কালো মুখ হনুমানদের সরকারিভাবে ঠিকমতো দেখভাল না করা, এদের সংরক্ষণে তেমন কোনো উদ্যোগ না নেওয়া, এদের প্রতি মানুষের অনিহার কারণে ও পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় এরা আজ বিলুপ্তের পথে। এছাড়া, অভয়ারণ্যের অভাবে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের কারণে কেশবপুরের হনুমানের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এখানকার কালো মুখো হনুমান বর্তমানে ক্ষুধার তাড়নায় মানুষের ঘরে ঢোকে, দোকান থেকে কলা-রুটি নিয়ে যায়, সবজি খেত নষ্ট করে। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি এদের নির্মমভাবে নির্যাতন করে। সরকারের পক্ষ থেকে এদের জন্য প্রতিদিন যে খাবার বরাদ্দ রয়েছে সেটাও তাদের ঠিকমতো দেওয়া হয় না। যদিও যা দেওয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। এমন দৃশ্য দেখা গেছে উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের বাগদা গ্রামে সাদ্দাম হোসেনের চায়ের দোকানে চালের ওপর ক্ষুধার্ত অবস্থায় বসা।
কেশবপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, কেশবপুর শহর ও শহরতলিতে প্রায় ৫০০ বিরল প্রজাতির কালো মুখ হনুমান রয়েছে। এরা খুব স্পর্শকাতর প্রাণী।
এদের ওপর কেউ হামলা করলে এরা দলবদ্ধভাবে থানায় গিয়ে অভিযোগ জানায়। এদের সরকারের তরফ থেকে প্রতিদিন ৩৫ কেজি কলা, ২ কেজি বাদাম ও ২ কেজি পাউরুটি দেওয়া হয়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন বলেন, ‘আমি কেশবপুরে নতুন যোগদান করলেও হনুমানের খাদ্য সংকট সম্পর্কে কিছুটা অবহিত হয়েছি, আগামী টেন্ডারের আগে খাদ্য বাড়ানোর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করব।’ এছাড়াও খাদ্য বণ্টনের ব্যাপারে তিনি তদারকি করেন বলেও জানিয়েছেন।
