পানগুছি-বলেশ্বরের রুপালি ইলিশে জেলে পল্লিতে উৎসব
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলের বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের পানগুছি বলেশ্বর নদের ইলিশ। যেমন তার রূপ, তেমন তার স্বাদণ্ডগন্ধ। একটি ঐতিহ্যও বলা চলে এই পানগুছি বলেশ্বরের ইলিশকে। দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী, সাগরের মধ্যে পানগুছি বলেশ্বর নদের ইলিশই সেরা। বাজারে ইলিশের দামও বেশি। ইলিশ ধরাকে কেন্দ্র করে উপকূলের কয়েক হাজার জেলের কর্মসংস্থানও হয়েছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে না বলে জানা যায়।
ইলিশের আসল স্বাদণ্ডগন্ধ পেতে চাইলে জুড়ি নেই মোরেলগঞ্জের পানগুছি শরণখোলার বলেশ্বরের ইলিশের। এই রূপালি ইলিশের নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে ভোজন রসিকদের। পদ্মার ইলিশের মতোই মোরেলগঞ্জের পানগুছি-বলেশ্বর নদের ইলিশেরও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা ও নামডাক। ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ মোরেলগঞ্জে ছুটে আসেন এই পানগুছির ইলিশের টানে। স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ শরণখোলায় ছুটে আসেন এই বলেশ্বরের ইলিশের টানে। কিনে নেন কোনোরকম বরফের স্পর্শ ছাড়া তাজা ইলিশ। আবার অনেকে ঢাকা, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও কিনে পাঠান সুস্বাদু এই ইলিশ। বলেশ্বরের ইলিশের নাম শুনলেই দামের দিকে তাকান না ইলিশপ্রেমীরা। পানগুছি বলেশ্বর নদে এখন প্রতিদিনই জেলের জালে ধরা পড়ছে মণকে মণ তরতাজা ইলিশ। দুপুরের পর থেকেই জেলেরা ভেজা কাপড়ে ইলিশ ভর্তি ঝুড়ি নিয়ে ফেরেন আড়তগুলোতে। আর বিকাল হলেই আড়ত থেকে সেই ইলিশগুলো চলে যায় উপজেলা শহর রায়েন্দা বাজার, পাঁচরাস্তা প্রশাসন মার্কেট মাছ বাজারসহ বিভিন্ন হাটে-বাজারে। এসব ইলিশ আকার ভেদে দাম হাকিয়ে বিক্রি করে থাকেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন-চারদিন ধরে প্রচুর বড় ইলিশ ধরা পড়ছে মোরেলগঞ্জের পানগুছি শরণখোলার বলেশ্বরে। রূপালি ইলিশের ঝিলিকে হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখেও। ৮০০-৯০০ গ্রাম থেকে শুরু করে দেড়-দুই কেজি ওজনের ইলিশ অহরহ উঠছে জেলের জালে। এরমধ্যে বেশিরভাগই মা ইলিশ। তবে, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও এর দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। যে কারণে বড় ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্নআয়ের মানুষ। মোরেলগঞ্জের পানগুছি শরণখোলার বলেশ্বর নদে জেলের জালে হঠাৎ ইলিশ ধরা পড়ার কারণ হিসেবে মৎস্য বিভাগ জানায়, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। আবহাওয়াও অনুকূলে। তাই বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসছে ইলিশের ঝাঁক। তাছাড়া, কিছুদিন বাদেই ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম শুরু হবে। এজন্য মা ইলিশগুলো সাগর থেকে ঝাঁক বেধে মিঠা পানির শাখা নদ-নদীতে চলে আসছে। যা ধরা পড়ছে জেলের জালে।
মোরেলগঞ্জে শহরের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছ ব্যবসায়ীরা রূপালি ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। একেক জনের ডালায় ২০-৩০ কেজি করে বড় সাইজের ইলিশ। প্রত্যেকটি ইলিশের পেটেই ডিম বোঝাই। ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দাম যাচাই-বাছাই করে বনিবনা হলে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের পছন্দসই ইলিশ। মোরেলগঞ্জে মাছ বাজারের ব্যবসায়ী কমিশনার ইউনুস সরদার, আব্দুল আউয়াল, মাতুব্বর লাভলু, শেখ সোহাগ হাওলাদার, খোকন হাওলাদার, আউয়াল, রাসেল হাওলাদার জানান, গত তিন-চারদিন ধরে পানগুছি বলেশ্বরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। সাইজও বেশ বড়। বর্তমানে ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং দুই কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা দরে কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এসব ব্যবসায়ীরা জানান, দাম যতোই হোক না কেন কোনো ইলিশই অবিক্রিত থাকে না। স্থানীয়দের পাশাপাশি তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও ইলিশ কিনে নেন তারা। ককসিট ভরে মোরেলগঞ্জের পানগুছি বলেশ্বরের ইলিশ পাঠান দূর-দূরান্তের স্বজনদের কাছে। মোরেলগঞ্জের পানগুছি বলেশ্বর নদের জেলে সোহেল শাহ, রাসেল হাওলাদারসহ অনেকেই জানান, কয়েকদিন আগেও সারাদিন জাল ফেলে দেড়-দুই কেজি জাটকা উঠতো। এখন বড় ইলিশ উঠছে। প্রতিদিন একেকজন জেলে ৮-১০ কেজি করে বড় ইলিশ পাচ্ছেন।
