পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে সেতু চান দুই জেলার মানুষ
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বেলাব (নরসিংদী) প্রতিনিধি

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার সল্লাবাদ ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের হালগড়ার মাঠ ও কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার ভৈরব শুম্ভপুরের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। এ নদের ওপর একটি সেতুর দাবিতে দুই জেলার মানুষ যুগের পর যুগ অপেক্ষা করলেও সেই স্বপ্ন আজও পূরণ হয় নি। আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিকবার প্রতিশ্রুতির পরও ১৫ বছরে সেতু নির্মাণ বাস্তবায়ন হয় নি।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন দুই পারের প্রায় ২-৩ হাজার মানুষকে নদী পার হতে হয় নৌকায়। শিক্ষার্থী, রোগী, কৃষক ও সাধারণ যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এ নদে সারাবছর পানি থাকায় বছরের ১২ মাসই নদী পারাপারে নৌকার উপর নির্ভর করতে হয়।
নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) আসন থেকে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় তিনি শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। অথচ এত প্রভাবশালী পদে থেকেও পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের ওপর প্রতিশ্রুত সেতু নির্মাণের কোনো অগ্রগতি হয় নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবারই তিনি এসেছেন, আশ্বাস দিয়েছেন সেতু হবে। মানুষ সরল বিশ্বাসে সেই কথায় ভরসা করেছে। কিন্তু আজও সেতু রয়ে গেছে কেবলই স্বপ্ন। কলেজছাত্রী সৌরভি আক্তার বলেন, অনেক সময় নৌকার জন্য বসে থাকতে হয়। দেরিতে ক্লাসে যেতে হয়। নৌকা না পেলে পরীক্ষায় দেরি হয়ে যায়।
স্থানীয় কৃষক শহিদ মিয়া বলেন, এলাকার শাকসবজি বিক্রির জন্য এইখানে সেতু হলে আমাদের কৃষকদের জন্য উপকার হবে। ফসলের ন্যায্যমূল্য পাব। নৌকার মাঝি বাচ্চু মিয়া বলেন, ৬ বছর ধরে আমি এখানে নৌকা চালাই। আমার দাদা সংগ্রামের সময় নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করতে গিয়ে পাকিস্তানিদের গুলিতে মারা গেছে। পরে আমার বাবা নৌকা দিয়ে লোক পারাপার করছে। নৌকা দিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার লোক পারাপার হয়। প্রতিজন লোক থেকে ভাড়া নিচ্ছি ৫ টাকা করে। আমি চাই, এখানে একটা সেতু হোক। সেতু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে। ইব্রাহীমপুর গ্রামের প্রকৌশলী এসএম শাহিনুর ইসলাম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত হালগড়া সেতু হলে ইব্রাহীমপুরসহ বেলাববাসী মানুষের দৈনন্দিন ব্যবসা বাণিজ্য জীবন মানের উন্নতি ঘটবে। এছাড়াও ভৈরবের হাসপাতালে রোগীর দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হবে এতে প্রসূতি মৃত্যুহার কমবে। ইব্রাহীমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আলফাজ উদ্দিন তালুকদার বলেন, এই গোদারা দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার লোক নৌকা দিয়ে পারাপার হয়ে থাকে। বিগত সময়ের সরকার এইখান দিয়ে সেতু করবে বলে বার বার আশ্বাস দিলে ও আর বাস্তবায়ন হয় নি। আমাদের দাবি যাতে দ্রুত সময় সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
সেতু নির্মাণ হলে নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলার যোগাযোগ সহজ হবে। শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী ও রোগী সবাই উপকৃত হবেন। দুই জেলার সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে আসবে গতি। পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের ওপর এই সেতু নির্মাণ আজ নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জের মানুষের প্রাণের দাবি।
সল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন স্বপন বলেন, এলজিইডি থেকে এসে সেতুর মাপঝোক ও মাটি পরীক্ষা করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে এই সেতু আর হয় নি। অথচ নদীর দুই পারের মানুষের জন্য এই সেতুটি অত্যন্ত প্রয়োজন। বেলাব উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার বলেন, এ নদীটি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী হওয়ার কারণে এটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর নদী শ্রেণিবিন্যাসের নীতিমালায় A ক্যাটাগরি নদী হিসেবে চিহ্নিত। আর A ক্যাটাগরির নদীর উপর সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের নিচে কোনো ব্রিজ নির্মাণ করা যায় না। এ নদীটি বেশি প্রশস্ত না হওয়ায় এ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। তবে যদি সরকারের নীতিমালা পরিবর্তন হয়, তাহলে এই নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব। বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, নদীর শ্রেণির পরিবর্তনের একটা বিষয় আছে আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করি খুব দ্রুত সময়ে সেতুটি নির্মাণ করা হবে।
