পরিবেশ দূষণরোধে প্লাস্টিক বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করতে হবে

বললেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চট্টগ্রাম ব্যুরো

পরিবেশ দূষণরোধে প্লাস্টিক বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গত সোমবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি), দ্য কোকাণ্ডকোলা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় আয়োজিত চট্টগ্রামে প্লাস্টিকস সার্কুলারিটি প্রকল্পের উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামকে আমি ক্লিন, গ্রীন, হেলদি সিটি হিসেবে গড়তে চাই। এ লক্ষ্য অর্জনে পরিবেশ দূষণরোধে প্লাস্টিক বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। এই সভার মাধ্যমে স্থানীয় অংশীদারদের নিয়ে সমন্বিত কার্যক্রমের সূচনা হলো, যার লক্ষ্য প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার বৃদ্ধি করা এবং পরিবেশে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রবাহ কমানো। একই সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মীদের বিশেষ করে নারী কর্মীদের জীবিকা ও কর্মপরিবেশ উন্নত করাও এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য।

সভায় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সরকারি সংস্থা, বেসরকারি খাত, নারীর অধিকার সংগঠন, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মীদের সংগঠন এবং উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮ লাখ টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এরমধ্যে চট্টগ্রাম শহরের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য কর্ণফুলী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশে পরিবেশ, মাছের ভান্ডার এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করে। এই প্রেক্ষাপটে প্লাস্টিকস সার্কুলারিটি প্রকল্প চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং টাঙ্গাইলে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো ১৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার করা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত প্রায় ২ হাজার কর্মীকে সহায়তা প্রদান, যার মধ্যে প্রায় ৬০০ জন নারী। এই উদ্যোগের অন্যতম ভিত্তি হলো ইউএনডিপি বাংলাদেশ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক। এর মাধ্যমে উভয় পক্ষ বর্জ্য আলাদা করা ও পুনর্ব্যবহার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উন্নত করতে, বিশেষ করে নারী কর্মীদের জন্য এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা গড়ে তুলতে, যাতে তারা পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি করতে পারে সেজন্য একসঙ্গে কাজ করবে। এছাড়া এই প্রকল্প গণসচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচারণা, কর্মশালা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-ভিত্তিক কার্যক্রম আয়োজন করবে। প্লাস্টিক যেন বর্জ্য হয়ে না থেকে নতুন সম্পদে পরিণত হয়, তার জন্য বাজার ও প্রযুক্তি নির্ভর সমাধান উদ্ভাবন করবে। চসিক সচিব আশরাফুল আমিন বলেন, আজকের এই উদ্বোধনী সভা চট্টগ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্য মোকাবিলায় আমাদের যৌথ যাত্রার শুরু। আমাদের নদী, সাগর এবং নাগরিকদের স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি আমাদের জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে আমরা একসঙ্গে কাজ শুরু করেছি।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি সর্দার এম আসাদুজ্জামান বলেন, প্লাস্টিককে আর বর্জ্য হিসেবে দেখা যাবে না, বরং এতে রয়েছে সম্পদে রূপান্তরের সুযোগ। একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চট্টগ্রাম গড়তে সিটি কর্পোরেশন এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ, স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবে। এই প্রকল্প প্রমাণ করবে যে অংশীদারিত্ব ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যকে অর্থনৈতিক সুযোগে রূপান্তর করা সম্ভব।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহি, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা প্রমুখ।