বিলুপ্তির পথে দেশি গাব ও নিশাচর পেঁচা

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

গ্রাম বাংলায় বন জঙ্গলে কিংবা রাস্তার পাশে ঝোঁপ-ঝাড়ে যে গাছটিকে ভূত পিচাশের আবাস মনে করা হতো তার নাম দেশি গাব। গাব গাছকে নিরাপদ মনে করে পেঁচার মতো সহজ সরল প্রাণী বসবাস করে। রাতের বেলায় পেঁচাকে ভূত পিচাশ ভেবে ভয় পায় না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। লোকালয়ের ঝোঁপ-ঝাড় ধ্বংস করে আবাদি জমি তৈরির ফলে অন্যান্য মূল্যবান গাছের মতো দেশি গাবও হারিয়ে যেতে বসেছে। সেইসঙ্গে বসবাসের উপযোগী নির্ভর নিরীহ প্রাণী পেঁচাও বিলুপ্ত হতে চলেছে। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে গ্রামাঞ্চলে একসময় প্রচুর গাব গাছ দেখা যেতো।

ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় মাছের অভায়ারণ্য ছিল। অনেক মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। ফলে তাদের মাছ ধরার জালের সুতায় গাবের আঠালো কষ দিয়ে জাল শক্ত করা হতো।

এ অঞ্চলে গাব গাছ নিয়ে মানুষের রয়েছে ব্যাপক ভীতি। গাব গাছে ভূত পিচাশ বাস করে। এর সত্যতা পাওয়া না গেলেও ঘন পল্লবের পরিপক্ক একটি গাব গাছ ৩০-৩৫ মিটার লম্বা আর ৬৫-৭০ মিটার ব্যাসের হয়ে থাকে। দেশি গাব ফল গোলাকার। খেতে হালকা মিষ্টি ও কষযুক্ত সবুজ ফল পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। গাবের ফল থেকে ট্যানি জাতীয় আঠা তৈরি করা হয়। টেকসই করতে এর আঠা জালে, পশুর চামড়ায় এবং নৌকায় মাখান হয়। বিভিন্ন এলাকায় এখনও পুরাতন দেশীয় অনেক গাব গাছ কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। দেশি গাব একপ্রকার সপুস্পক উদ্ভিদের ফল।

গাব গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ডায়োস্পিরিস মালবারিক, যা ইবেনেসিই পরিবারভুক্ত। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম ‘তিন্দুকা’ হিন্দি ভাষায় ‘গাব’ এবং তামিল ভাষায় ‘তুম্বিকা’। গাবের আদি জন্ম স্থান ফিলিপাইন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া। গ্রীষ্মকালে গাব গাছের কচিপাতা দেখে মনে হয় প্রকৃতি যেন নতুন সাজে সজ্জিত হয়েছে। এ সময় গাব গাছের কচিপাতা দেখে মনে হয় শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো নতুন ছবি। নতুন গজান পাতার ছবি দেখে মনে হয়– রঙেরা হেসে হেসে, নেচে নেচে খেলা করছে। গাব গাছের কচিপাতারা যেনো রঙিন শাড়ি পড়ে হাতছানি দিয়ে প্রকৃতি প্রেমিকদের ডাকছে। অনেক সময় বনে-জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবে গাব গাছ জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠে। বর্তমানে সখ করে দেশি গাব গাছ লাগানোর প্রবণতা খুবই কম। তবে বর্তমানে বিদেশি গাব গাছ লাগানোর দিকে ঝুঁকছে মানুষ। বিদেশি গাব গাছ দেশি গাব গাছের মতো এত বড় হয় না। বিদেশি গাব অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু। এর চাহিদা ও অনেক।

দেশি গাব গাছের কাঠ ঘরবাড়ি তৈরির কাজে লাগান যায়। গাব একটি অতি পরিচিত দেশি ফল। গাব ফলে রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধিগুণ। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য চিরঞ্জীব বনৌষধিতে গাবের বিভিন্ন ভেষজ প্রয়োগের কথা উল্লেখ করেছেন। বহুমুত্র, ক্যান্সার, একজিমা, চর্মরোগ, আমাশয়, মূত্ররোগে গাব একটি কার্যকর ভেষজ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এই গাব গাছ টিকিয়ে রাখার তাগিদ দিচ্ছেন পরিবেশবিদ ও প্রকৃতি প্রেমিরা।