চান্দিনায় মাল্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে ফল চাষ। সেই সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মেহার গ্রামের বাসিন্দা গোলাপী বেগম। তিনি একজন সাধারণ গৃহিণী হলেও দৃঢ় মনোবল ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ঘরের আঙিনাতেই গড়ে তুলেছেন এক অনন্য সাফল্যের গল্প। কয়েক বছর আগে শখের বসে বাড়ির পাশে কয়েকটি মাল্টার চারা লাগিয়েছিলেন তিনি। এখন সেই আঙিনা ভরে উঠেছে থোকায় থোকায় মাল্টার ফলনে।

প্রথম দিকে অনেকেই ভেবেছিল, মাল্টা বিদেশি ফল, গ্রামে টিকবে না। প্রতিবেশীদের কৌতূহল ও কিছুটা অবিশ্বাস সত্ত্বেও গোলাপী বেগম নিরলসভাবে গাছের পরিচর্যা চালিয়ে যান। নিয়মিত পানি দেওয়া, জৈব সার ব্যবহার এবং রোগবালাই দমন, সবই করেছেন নিজের আগ্রহ ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে। ফলাফল এসেছে হাতে-নাতে। এখন তার প্রতিটি গাছে প্রচুর মাল্টা ধরেছে। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, স্বাদেও তেমনি সুস্বাদু। গোলাপী বেগম জানান, শুরুতে শখের বসে গাছ লাগালেও এখন মাল্টা বিক্রি করে পরিবারের আর্থিক চাহিদা মেটাতে পারছেন। স্থানীয় বাজারে তার মাল্টার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এ থেকে আয় করে সংসারের খরচে সহযোগিতা করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, সন্তানদের পড়াশোনার খরচও বহন করতে পারছেন এই আঙিনার ফলন থেকেই। তার এ উদ্যোগে গ্রামের অন্যান্য নারীও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। অনেকে ছোট ছোট আঙিনায় মাল্টা ও অন্যান্য ফলের গাছ লাগাতে শুরু করেছেন। এতে একদিকে যেমন পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়তি ফলন বিক্রি করে আয় করার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, গোলাপী বেগমের বাগান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যদি বৃহৎ আকারে মাল্টা চাষ শুরু হয়, তবে দেশের ফলের বাজারে আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে।

গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নেও এ উদ্যোগ নতুন দিগন্ত খুলেছে। আগে যেখানে নারীরা গৃহস্থালির কাজেই সীমাবদ্ধ ছিলেন, এখন তারা কৃষি ও উদ্যোক্তা খাতেও নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করছেন। গোলাপী বেগম দেখিয়েছেন, সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রম ও যত্নশীলতা থাকলে বাড়ির আঙিনার অল্প জমিই হয়ে উঠতে পারে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্র।

গোলাপী বেগমের আঙিনা শুধুমাত্র মাল্টার বাগান নয়, বরং এখানে রয়েছে আরও বিভিন্ন ধরনের ফলজ গাছ। এ বাগান এখন অনুপ্রেরণার উৎস। তার সাফল্য প্রমাণ করেছে, গ্রামীণ জীবনের প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানো গেলে নিজের পরিবার তো বটেই, সমাজ ও দেশও উপকৃত হয়। তার মাল্টা বাগান এখন গ্রামীণ নারীর দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস ও সফলতার প্রতীক।