সাগর থেকে তীরে ফিরেছেন পাথরঘাটার জেলেরা

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে আজ শুক্রবার রাত ১২টার পর থেক বাংলাদেশের সব নদ-নদী ও সাগরে ২২ দিনের জন্য ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা। এই সময়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় এবং মজুদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা মানার জন্য এরইমধ্যে সাগর থেকে ফিরতে শুরু করেছে হাজার হাজার জেলেসহ শত শত মাছধরা ট্রলার। মা ইলিশ রক্ষায় আবারও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার আজ থেকে শুরু করে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এ নিষেধাজ্ঞা। গতবছর এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে ছিল ১৩ অক্টোবর থেকে। মৎস্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, এই সিদ্ধান্ত বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ ও পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে যাতে ইলিশের প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা কমিয়ে সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন আইন অমান্য করলে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ১-২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা, বা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য হতে পারে। সাগর ও নদীতে নজরদারির দায়িত্বে থাকবে মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থানীয় জেলেদের এই আদেশ রক্ষা করতে মৎস্য বিভাগ এবং পুলিশ প্রশাসন জেলেদের সচেতন করার জন্য উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এরইমধ্যে জেলেরা তাদের জাল ও ট্রলার তীরে তুলে এনে নিষেধাজ্ঞা মানার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা আশাবাদী যে, নিষিদ্ধাজ্ঞা শেষ হতেই তারা আবার মাছ শিকার শুরু করতে পারবেন এবং বেশি বেশি মাছ পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

মৎস্য বিভাগ থেকে জানা গেছে আশ্বিনের পূর্ণিমায় ইলিশ প্রজননের প্রধান মৌসুম এ সময় সমুদ্র থেকে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানির নদ-নদীতে চলে আসে মা ইলিশ। আর এই ডিম ছাড়া নির্বিঘ্ন করতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সরকার।

জেলেরা জানান, আষাঢ় থেকে আশ্বিন চার মাস ইলিশ শিকারের প্রধান মৌসুম। কিন্তু এরমধ্যে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইলিশ শিকার করতে না পারা এবং নদ-নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ না থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছেন জেলে ও ট্রলার মালিকরা। জেলেরা আরও জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় উপকূলের প্রায় দেড় লাখ জেলে বেকার হয়ে পড়ে। এতে পরিবার চালাতে সরকারের কাছে খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা দাবি করেন তারা। নিষিদ্ধ থাকাকালে ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের সরকার ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেবে বলে পাথরঘাটা মৎস্য বিভাগ থেকে জানা গেছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড, আশরাফুল আলম জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রাম ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ইলিশের বিভিন্ন অভয় আশ্রমে গবেষণা করা হয়েছে। তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে এই গবেষণায় নদী ও সমুদ্রে বিচরণরত ইলিশের মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়া উপযুক্ত হয়েছে বলে তথ্যে উঠে এসেছে।

ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মান্নান মিয়া জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে নদ নদীতে তেমন মাছের দেখা মিলছে না। গবেষকরা যতই গবেষণা করুন, যদি নদ-নদী থেকে অবৈধ ট্রলিং ট্রলার বোর্ড, ভারতীয় অত্যাধুনিক ট্রলিং ট্রলার বোর্ড, অবৈধ নিষিদ্ধ জাল, ঘোপ জাল, বেহুন্দী জাল, চরগরা বন্ধসহ নেট জাল সাগরে ফেলা শতভাগ নিষিদ্ধ না করলে, ইলিশ ও যাবতীয় মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এতে আর্থিক সংকটে পড়বে দেশ। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী টলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, মাই ইলিশ রক্ষায় জেলেরা শতভাগ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত। তবে এই সময় যেন ভারতের ট্রলার বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

পাথরঘাটা উপজেলার সিনিয়র মৎস্যকর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিবুল হক বলেন, সাগর ও নদীতে নিষেধাজ্ঞার এই ২২ দিন কোনো ছেলেকে মাছ শিকার করতে দেওয়া হবে না। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম সফল করতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।