চান্দিনায় যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় গ্যাস সিলিন্ডার এখন যেন হাটে-মাঠে, দোকানে-ঘরের সামনে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। অনুমোদিত ডিপো বা নিরাপদ গুদামের পরিবর্তে স্থানীয় ছোটখাটো মুদি দোকান, চায়ের স্টল, এমনকি রাস্তার ধারের টংঘরেও সিলিন্ডার মজুত ও বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, সামান্য অসতর্কতা বা দুর্ঘটনাই বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড বা প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চান্দিনা পৌরসভা ও আশপাশের ইউনিয়নগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১২ কেজি ও ৩৫ কেজি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীনভাবে। সিলিন্ডার ব্যবসার জন্য কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট নিয়মনীতি থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ছাড়াই ছোট দোকানে সিলিন্ডারের স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। অনেক সময় সিলিন্ডার বিক্রেতারা সঠিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্তও নন। ফলে সিলিন্ডার ফাঁস, লিকেজ কিংবা বিস্ফোরণের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে।
চান্দিনা উপজেলার কিছু এলাকায় দেখা গেছে, মোটরসাইকেল, রিকশা বা ভ্যানেই সিলিন্ডার বহন ও সরবরাহ করা হচ্ছে। পরিবহনের সময় নিরাপত্তা বিধি না মানায় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস সিলিন্ডার সবসময় ছায়াযুক্ত ও নিরাপদ স্থানে রাখতে হয়, আগুনের উৎস থেকে দূরে রাখতে হয় এবং পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকতে হয়। কিন্তু এসব নিয়ম যেন পুরোপুরি উপেক্ষিত হচ্ছে।
চান্দিনা পৌরসভার বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, আমাদের পাশের মুদি দোকানেই গ্যাস সিলিন্ডার রাখা আছে। দোকানের ভেতরেই চুলা জ্বালিয়ে চা বানানো হয়। আল্লাহ না করুক, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আশপাশের পাঁচণ্ডছয়টি দোকান একসঙ্গে পুড়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাজারের আরেক ব্যবসায়ী জানালেন, সিলিন্ডার বিক্রির জন্য কেউই সঠিক অনুমতি নেয়নি। যারা ব্যবসা করছেন, তারা শুধুই মুনাফার জন্য ঝুঁকি নিচ্ছেন। অথচ একটি বিস্ফোরণে কত মানুষ প্রাণ হারাতে পারে, সেই ভয়টা যেন কারও নেই। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে অসচেতনতা সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। যত্রতত্র বিক্রি ও সংরক্ষণ করলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। গ্যাস লিকেজ হলে বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহ হয় যে কয়েক মিনিটেই বড় অগ্নিকাণ্ডে রূপ নিতে পারে। তাই এই ব্যবসা অবশ্যই নির্ধারিত নীতিমালা মেনে পরিচালনা করতে হবে। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, প্রশাসনকে এখনই কঠোর হতে হবে। অনুমোদনহীন দোকানে সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ করতে হবে। বিক্রেতাদের নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম বাধ্যতামূলক করতে হবে। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষকে সঠিকভাবে সিলিন্ডার ব্যবহার ও সংরক্ষণের নিয়ম সম্পর্কে জানাতে হবে।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে। যত্রতত্র সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
