ময়নামতি রেশম উৎপাদন ও গবেষণাকেন্দ্রে নানা সংকট

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নজরুল ইসলাম দুলাল, কুমিল্লা

রেশম শিল্পের বিশ্ববাজারে কদর বাড়লেও জনবল ও অর্থ বরাদ্দসহ নানা সংকটের কারণে এ শিল্প দৈন্যদশায় হাবুডুবু খাচ্ছে। বর্তমানে বড় ধরনের ভর্তুকি দিয়ে চলছে কুমিল্লার ময়নামতি রেশম উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্র। শুধু ময়নামতি রেশম উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে সরকারি কোষাগারে এক লাখ টাকা জমা হলেও সব মিলিয়ে বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। তবে ময়নামতি কেন্দ্রে গবেষণার মাধ্যমে রেশম ডিম ও গুটি উৎপাদনে বেশ সফলতা অর্জন করলেও এখানে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণসহ ডিম সরবরাহ করেও রেশম চাষে লোকজনকে আগ্রহী করা যাচ্ছে না। ময়নামতি রেশম উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ১৯৬২ সালে জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি পাহাড়ি এলাকায় ১৬ একর ভূমিতে ময়নামতি রেশম উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। ভূমির বৃহদাংশে রেশম গাছ উৎপাদন করা হয় এবং বাকি অংশে রয়েছে অফিস, গবেষণা, ল্যাবরেটরি, আবাসিক ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ডরমেটরিসহ ভবনগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ। এক সময় এখানে রেশম গুটি থেকে সুতা তৈরির যন্ত্রপাতি থাকলেও এখন নেই। এখন এ রেশম কেন্দ্রে জনবল আছে মাত্র দুই জন। এর মধ্যে একজন ম্যানেজার ও অন্যজন টেকনিক্যাল সুপারভাইজার। এছাড়া এখানে সহকারী পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন আঞ্চলিক রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় ঢাকার একজন উপ-পরিচালক। তুঁত গাছের চারা রোপন, পরিচর্যা, রেশম কীট লালন-পালনে আটজন শ্রমিক দৈনিক ৪৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন।

সূত্র জানায়, এ শিল্পকে বাঁচাতে বছরে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হল, রেশম চাষ এবং রেশম শিল্পকে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারিত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। ময়নামতি রেশম কেন্দ্র থেকে গত দুইটি অর্থ বছরে সরকারের কোষাগারে প্রায় এক লাখ টাকা জমা হলেও এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিল, জনবল ও দৈনিক শ্রমিকসহ সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। রেশম চাষে সংশ্লিষ্টরা জানান, এ শিল্পকে লাভজনক করতে বিদেশি সুতা ও বস্ত্রের আমদানি শুল্ক বাড়ানোসহ কঠোর নীতিমালা করা প্রয়োজন। রেশম চাষীদের অধিকাংশই প্রান্তিক ভূমিহীন। তাদের যথেষ্ট পরিমাণে মূলধন নেই এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতাও অপ্রতুল। তাদের উৎপাদিত সুতা ও গুটি বাজারজাত করার প্রতিবন্ধকতা দূর করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।

ময়নামতি রেশম উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেক জানান, দেশে রেশমী সুতার যথেষ্ট চাহিদা থাকলেও বিদেশি সুতা ও নকল রেশমী সুতায় বাজার দখল করার কারণে দেশীয় এ শিল্পে সুদিন ফিরতে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূরীকরণে সরকার কাজ করছে। তিনি আরও জানান, প্রয়োজনীয় জনবল ও অর্থ সংকটের মাঝেও রেশম ডিম ও গুটি উৎপাদনে ময়নামতিসহ দেশের অন্যান্য রেশম কেন্দ্রের সফলতা আছে বলা যায়। এ শিল্পের প্রসারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে বিপুল অর্থ ভর্তুকি দিয়ে সহায়তা করছে।