নওগাঁয় ঝড়ের তাণ্ডবে ২০ গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর পত্নীতলা, মহাদেবপুর ও সদর উপজেলার ওপর দিয়ে আকস্মিক ঝড় বয়ে গেছে। গত শনিবার বিকাল ৪টার দিকে প্রায় আধা ঘণ্টার ঝড়ে ব্যাপক ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বহু গাছ উপড়ে পড়ে এবং বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পত্নীতলা উপজেলায়। ঘটনার পর থেকে পত্নীতলা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রশাসন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার দিয়ে সহযোগীতা করা হয়েছে। তবে জেলা পর্যায়ে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। ঝড়ের পর থেকে মানুষ রাতে অন্ধকারে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করতে হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় পত্নীতলা উপজেলার ভাবিচা, দোচাই, যুগীবাড়ি, রঘুনাথপুরসহ প্রায় ২০টি গ্রাম। পত্নীতলা পল্লী বিদ্যুৎ রিজিয়ন ২ এর আওতায় ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে এবং তার ছিড়ে যায়। এতে করে ৩০টি গ্রামের ৯ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বঞ্চিত রয়েছে। সংযোগ মেরামতে কাজ কাজ করা হচ্ছে। জেলার বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫১ কিলোমিটার এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০ মিলিমিটার।

স্থানীয়রা জানান, অসময়ে হঠাৎ এমন ঝড়-বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড হয় ঘরবাড়ি-দোকানপাট ও গাছপালা। ঘরের টিন উড়ে যাওয়া বৃষ্টিতে থাকা চাল, ডাল ও আসবাব নষ্ট হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলা ও পেঁপে বাগানের। এতে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষক। সহযোগীতার দাবি জানান তারা। উপজেলার ভাবিচা গ্রামের রেজাউল করিম বাবু বলেন, এমন ঝড়বৃষ্টি আগে কখনও দেখিনি। প্রায় ২০ মিনিটের মতো ঝড়ে বারান্দার টিনের চাল উড়ে যায়। সকালে সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। ঝড়ে বিদ্যুৎের খুঁটি ভেঙে পড়ে এবং তারগুলো ছিড়ে যায়। ২৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুৎ আসেনি। ফোনের চার্জ না থাকা বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

একই গ্রামের জামাল উদ্দিন বলেন, ঝড়ে বাড়ির চারটি ঘরের টিন উড়ে যাওয়ার পর চাল-ডাল ও ধান এবং জামা-কাপড় যা আছে সবগুলো ভিজে গেছে। টিন উড়ে যাওয়ার পর কিছু পাওয়া গেছে। আরও ৫ হাজার টাকার নতুন টিন কিনে এসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চালা মেরামত করা হয়। খিরসিন গ্রামের কলাচাষি ফজর উদ্দিন বলেন, ১০ কাঠা জমির কলাবাগানের সবগুলো গাছ ভেঙে পড়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে। প্রায় গাছে কাঁদি আসছিল। এরমধ্যে ২০ পিস পরিপক্ক হওয়ায় সেগুলো বিক্রি করা হয়। বাকি অপরিপক্ক কাঁধি জমিতে পড়ে আছে। ঝড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছি। এছাড়া ঝড়ে অনেকের ধানও জমিতে শুয়ে পড়ে।

দোচাই গ্রামের দিনমজুর পল্লব বলেন, ঝড়ের সময় বাড়িতে ছিলাম না। এ সময় স্ত্রী ও সন্তান তার টিনের বেড়ার বাড়িতে ছিলো। ঝড়ে ঘরের বাঁশ ভেঙে স্ত্রীর পায়ের ওপর পড়ায় আহত হয়। কিছু টিন উড়ে চলে যাওয়ায় পাওয়া যায়নি। দুপুরে উপজেলা থেকে এক বস্তা শুকনা খাবার দিয়েছে। পত্নীতলা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ঝড়ে উপজেলার ৪০ হেক্টর জমির কলা ও পেঁপে বাগান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। টাকার অঙ্কে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে ক্ষতি নিরুপনে আগামীতে প্রনোদনা দিয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলীমুজ্জামান মিলন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে তাৎক্ষণিক শুকনা খাবার দিয়ে সহযোগীতা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যাদের টিন উড়ে গেছে তাদের টিন দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ টিন মজুত রয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন থেতে এরইমধ্যে ৫ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।