মিরসরাই ও জোরারগঞ্জে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে চুরি-ডাকাতি
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আবু সাঈদ ভূঁইয়া, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানা এলাকার ১৬ ইউনিয়ন, দুই পৌরসভায় আশঙ্কাজনকহারে চুরি ডাকাতি বেড়েছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মানুষ। চুরি-ডাকাতি ছাড়া মারামারি, হামলা-পাল্টা হামলা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড থেমে নেই। পুলিশ রাতে-দিনে টহল বাড়িয়েও অপরাধ কমাতে পারছেনা। গত এক সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯ সেপ্টেম্বর বিকাল চারটার দিকে উপজেলার মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের উত্তর তালবাড়িয়া গ্রামের জয়নাল উদ্দিন সরদার বাড়ির কামরুল হাসানের বসতঘরের তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে আলমারির লক ভেঙে ৫ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যবহার সামগ্রী ও ব্যবহারের কাপড়চোপড় লুট করে নিয়ে যায়।
২০ সেপ্টেম্বর ভোরে হিঙ্গুলী ইউনিয়নে ১০-১২ জনের একটি চক্র আজমনগর গ্রামের মণি কন্ট্রাক্টর বাড়িতে সব লুট করে নিয়ে যায়। একইদিন বারইয়ারহাট পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সোনা পাহাড় ভাসানীর বাড়িতে কাতার প্রবাসী ও মিরসরাই সমিতি কাতার এর প্রচার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম এর বাসায় দুর্র্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় তার বাসা থেকে মূল্যবান ২ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ৪৫ হাজার টাকা ও একটি ডিজিটাল ক্যামেরা, ব্যাংকের চেক বই, ও দলিল চুরি করে নিয়ে যায়। এ সময় চেকের পাতায় কয়েকটি চেক স্বাক্ষরিত ছিল বলে জানায় প্রবাসী আরিফুল ইসলাম। ওইদিন দুপুরে বারইয়ারহাট পৌরসভার প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম এর বাসায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। উনার নিজ বাড়ি কুমিল্লায় যাওয়ার পর সন্ধ্যায় বাসায় এসে দেখে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নেই এবং সবকিছু এলোমেলো। পুরো বিল্ডিং ও প্রতিটি তলা সিসি ক্যামেরার আওতাধীন তবুও কিছু করার নেই। ২১ সেপ্টেম্বর রাতের কোনো একটা সময়ে মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদে চুরির ঘটনা ঘটেছে। একটি কম্পিউটার মনিটর সিপিইউ ও নগদ ৪২ হাজার টাকা লুট।
একই রাতে মিরসরাই পৌর সদরের কলেজ রোডের টুকু মিয়া শপিং কমপ্লেক্সে তিনটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরের দল সিয়াম অ্যান্ড সিফাত জেন্টস ফ্যাশনের নগদ ৬০ হাজার টাকা ও জেন্টস আইটেম, সিয়াম অ্যান্ড সিফাত স্পোর্টস, বিছমিল্লাহ কুলিং কর্নারের সিগারেট নিয়ে যায়। উত্তর ওয়াহেদপুরে চায়ের দোকানের টাকা ও মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।
২২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে দিকে মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের রায়পুর গ্রামের ঠাকুরবাড়ির পাপন আচার্য্যরে বসতঘরে সিঁদ খুঁড়ে চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় নগদ ২০ হাজার টাকা ও এক জোড়া কানের দুল নিয়ে যায়। একইদিন রাত ৪টার দিকে ১২নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পশ্চিম খৈয়াছড়া গ্রামে চুরির ঘটনা ঘটেছে। খৈয়াছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে আবছার সাবের বাড়ির মোয়াজ্জেম হোসেন তপনের ঘরে এক দল চোর ঘরের তালা কেটে ঘরের জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করে ফেলে। গত ৩ অক্টোবর ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিনকি আস্তানা এলাকায় গরু বোঝাই ট্রাক থেকে ২ লক্ষ টাকা ও তিনটি মোবাইল নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
এছাড়াও প্রতিনিয়ত মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পৌরসভা, হিঙ্গুলী, করেরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে টিউবওয়েল, পানির মোটর, এসি, বিদ্যুৎ এর কেবলস, ট্রান্সফরমার, গরু, হাঁস-মুরগি চুরির ঘটনা ঘটছে। বারইয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম পাভেল বলেন, যেভাবে চুরি ডাকাতি বেড়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরীজীবি। সকালে বাসায় তালা দিয়ে যাওয়ার পর সারাদিন দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।
আরিফুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগি জানান, থানায় অভিযোগ দিয়েও লাভ হয় না। পুলিশ চুরির সঙ্গে জড়িত কাউকে সনাক্ত করে আটক করতে পারেনি। এ বিষয়ে মিরসরাই থানার ওসি আতিকুর রহমান ও জোরারগঞ্জ থানার ওসি এম আব্দুল হালিম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতে পুলিশের বিভিন্ন টিম টহলে থাকে। আমরা রাতে একটুও ঘুমাইনা। তারা আরও বলেন, পুলিশ নিয়মিত অভিযানে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করছে। মানুষদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এলাকায় ও বাড়ির আশপাশে অপরিচিত লোক দেখলে পুলিশকে খবর দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা।
