ভাঙা সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জিয়াউর রহমান, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় বেড়েরধন খালের ওপর ভাঙা সেতুটি ৬ বছরে মেরামত হয়নি। ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে সুপারি গাছ ও বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে দুই পাড়ের জনগণ পারাপার করছে। সেতুটি মেরামত না করায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ ও যাতায়াতে ঝুঁকি বাড়ছে। সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ডোমরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার বলছে, ‘সাঁকো পার হইয়া স্কুলে যাইতে ভয় পাই, ব্রিজটা কেন নির্মাণ করে না। মোগো লেখাপড়া বন্ধ হইয়া যাইবে। ছয় বছর হয় ব্রিজটা ভাইঙা গেছে। ইঞ্জিনিয়ার অফিসের লোকজন কয়বার আইছে । কিন্তু ব্রিজ নির্মাণের কোনো কিছুই দেহি না।’ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এ কথাগুলো বলেছিল আয়েশা আক্তার।

জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৭ এপ্রিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বেড়েরধন খালের ওপর ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যর একটি লোহার সেতুটি নির্মাণ করে। ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি গভীর রাতে মালবাহী কার্গোর ধাক্কায় সেতুটির পশ্চিম প্রান্তের একাংশ খালে ভেঙে পড়ে যায়। এতে আহত হয়ে একজন কার্গো শ্রমিক নিহত হয়। পরে এলাকাবাসী নৌকার মাধ্যমে পারাপার হতো। এখন নিজস্ব অর্থায়নে পশ্চিম প্রান্তে ভাঙা অংশে সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন।

জানা যায়, বেড়েরধন খালের পূর্ব প্রান্তে রয়েছে- ডোমরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়াও রয়েছে- উপজেলা শহর সুবিদখালী বাজার, দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া, পূর্ব সুবিদখালী ও উত্তর আমড়াগাছিয়া গ্রাম। পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে- বাসন্ডা, রহিমাবাদ ও জলিসা গ্রামসহ গোয়ালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাসন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বেতাগী উপজেলা শহর।

দুই উপজেলার বাসিন্দারা উপজেলা শহরের হাটবাজারে পণ্য সামগ্রী কেনা-বেচা ও স্কুল কলেজের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সড়ক পথে যেতে বেড়েরধন খালের ওপর ডোমরাবাদ ও জলিসা সেতু পার হতে হতো। সেতুটি ভেঙে যাওয়ার ছয় বছর পর স্থানীয়দের সহায়তায় সেখানে একটি সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। যা পার হতে শিক্ষার্থীসহ বৃদ্ধ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। গত ১০ অক্টোবর সকালে সরেজমিনে গেলে ডোমরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সবুজ বলেন, সেতু ভেঙে যাওয়ায় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সেতুর ভাঙা অংশের পশ্চিম পাশে একটি সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে ভয় লাগে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, এখানে যেন দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। সেতুর জন্য আমাদের লেখাপড়ার যেন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয়। বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের কৃষক মো. আউয়াল খান বলেন, সেতু ভেঙে যাওয়ায় সুবিদখালী বাজারে কৃষিপণ্য নিয়ে যেতে পারছি না। এ এলাকার কৃষকেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, ২০০৬ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়।

২০২০ সালে কার্গোর ধাক্কায় সেতুটি ভেঙে যায়। প্রায় ৬ বছর পার হলেও ভাঙা সেতুর স্থানে নতুন সেতু নির্মাণ করতে পারেনি এলজিইডি। এলাকাবাসী অস্থায়ীভাবে নিজস্ব অর্থায়নে সাঁকো তৈরি করে পারাপার হচ্ছে। কবে এখানে সেতু নির্মাণ হবে দেখে যেতে পারি কি না জানি না।

সেতু-সংলগ্ন মির্জাগঞ্জ পাড়ের ডোমরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.ফিরোজ আলম বলেন, সেতুটি ভাঙার পর পশ্চিম পাড়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। ফলে বিদ্যালয়ে প্রতি বছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি এখানে যেন দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, সেতুটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার প্রকল্পে পাঠানো হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবে (ডিপিপি) অনুমোদন হলে সেতুটি দ্রুত নির্মাণ করা সম্ভব হবে।