দিনাজপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কূপের অস্তিত্ব
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সিদ্দিক হোসেন, দিনাজপুর

দিনাজপুরের জেলায় গ্রামীণ জনপদে একসময় পানি সংগ্রহের প্রধান উৎস ছিল কতবে কালের বিবর্তন আর আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আজ সেই কুপ হারিয়ে যেতে বসেছে। গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠা এই কুপ আজ ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে।
একসময় দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রায় প্রতিটি গ্রামে, এমনকি শহরাঞ্চলেও দেখা যেত কূপ। গৃহস্থ বাড়ির উঠোনে কিংবা গ্রামের মাঝখানে কূপ খনন করা হতো বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের জন্য। এ পানি রান্না, খাওয়া, গোসল এমনকি কৃষিকাজেও ব্যবহৃত হতো। গ্রামীণ নারীরা সকালে কিংবা বিকালে কূপ থেকে পানি তোলার পাশাপাশি আড্ডায় মেতে উঠতেন। গ্রামের সামাজিক যোগাযোগ ও আন্তরিকতার এক বড় ক্ষেত্রও ছিল এই কূপকে ঘিরে। কিন্তু বর্তমানে টিউবওয়েল, ডিপ-টিউবওয়েল ও মোটরচালিত পানির সহজলভ্যতায় কূপ ব্যবহার প্রায় বিলুপ্ত। নতুন প্রজন্মের অনেকেই কূপের নাম শুনলেও বাস্তবে দেখার সুযোগ পায়নি। শহরের আশপাশ এবং প্রত্যন্ত গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের কাজল গ্রামে হারিয়ে যাওয়া কূপ দেখতে পাওয়া যায়, বহু কূপ ভরাট করে ফেলা হয়েছে কিংবা অবহেলায় ভেঙে পড়েছে। কিছু কূপ এখনও আছে বটে, তবে সেগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় প্রবীণ মো. মফির উদ্দিন (৭৩) জানান কূপ একসময় ছিল জীবনের অংশ। পুকুর কিংবা নদী-নালা দূষিত হলে কূপের পানিই ছিল ভরসা। কূপকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ সংস্কৃতিরও বিকাশ ঘটেছিল। বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে কূপের পানি ব্যবহৃত হতো। দিনাজপুর সদর উপজেলার রামডুবি গ্রামের প্রবীণ মহিলা হামিদা বেগম (৬৮) বলেন, ছোটবেলায় আমরা কূপ থেকেই পানি খেতাম। এখন আর কোথাও কূপ চোখে পড়ে না। এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে দেখে মন খারাপ হয়। দিনাজপুর সরকারি কলেজর অধ্যাপক আশিস কুমার সরকার জানান, দিনাজপুরে কূপ কেবল পানির উৎস নয়, এটি ছিল গ্রামীণ সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। কালের পরিবর্তনে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রয়োজন সচেতনতা ও সংরক্ষণের উদ্যোগ। নাহলে কয়েক বছরের মধ্যেই কূপ কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। মানুষ আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে থাকলেও, হারিয়ে যাচ্ছে তাদের এক মূল্যবান ঐতিহ্য- কূপ। যা সংরক্ষণের দায়িত্ব এখন সমাজ ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নেওয়া জরুরি।
