মনপুরার চরাঞ্চলে ঝুঁকি নিয়ে ৫০ হাজার মানুষের বসবাস
৭৭.৫৩ কিমি. বেড়িবাঁধ বিলীন
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি

ভোলা জেলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। মেঘনায় সামান্য জোয়ার হলেই প্লাবিত হচ্ছে চরগুলো। জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড় হলে ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে প্রতিনিয়ত।
৮০-র দশকে মনপুরা দ্বীপের মূল ভূখণ্ড রক্ষায় চারদিকে ৭৭.৫৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়।
মেঘনা নদীর প্রবল গ্রাসে অর্ধেকেরও বেশি বিলীন হয়ে যাওয়ায় নতুন করে ৫০ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মনপুরার উত্তরে বিচ্ছিন্ন কলাতলির চরে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। মেঘনার জোয়ার সামান্য বৃদ্ধি পেলেই পুরো চর প্লাবিত হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। এছাড়াও কাজীর চর, ঢাল চরে নেই কোনো বেড়িবাঁধ। এই দুই চরে বসবাস করছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এদিকে পশ্চিমে বিচ্ছিন্ন শহিদ সামছুদ্দিন চর, চর নজরুল, পূর্বে বদনার চর, লালচরে নেই কোনো বেড়িবাঁধ। তাছাড়া দক্ষিণে সাগর মোহনায় চর নিজামে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। এসব চরে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ অরক্ষিত অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। সামান্য জোয়ারেই প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে এসব চরের বাসিন্দারা।
এ ব্যাপারে উপজেলার কলাতলি চরের বাসিন্দা মিজান, সালাম, আল আমীন, সাদ্দাম জানান, এই চরটি নবগঠিত ইউনিয়ন পরিষদে রুপান্তরিত হলেও এখন পর্যন্ত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। চারদিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় চরটি সামান্য জোয়ার হলেই ডুবে যায়।
এতে চরের বাসিন্দারা বেশিরভাগ সময়ই পানিবন্দি থাকতে হয়। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত চর নিজাম দ্বীপের বাসিন্দা কালাম মাঝি, সুমন, ফয়সাল, কাদের জানান, চরটি সাগরের মোহনায় হওয়ায় বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ সবসময় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এছাড়াও মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন শহিদ সামছুদ্দিন চর, চর নজরুল ও বদনারচরে কোনো প্রকার বেড়িবাঁধ ও সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় হাজার হাজার মানুষ সবসময় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এসব চরাঞ্চলে দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর গোর্কি নামের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে আঘাত হেনেছিল।
এতে বেড়িবাঁধ ও সাইক্লোন সেন্টার না থাকার কারণে মনপুরা উপকূলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। তারা দুঃসহ সেই রাতের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি। সেই থেকে সাগরে কোনো লঘুচাপ বা নিম্মচাপের খবর শুনলেই তারা ভয়ে আঁতকে ওঠেন। মনপুরার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোলা-০২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফাউদদৌলা জানান, মনপুরায় ৫০ কিলোমিটার নতুন বেড়িবাঁধের কাজ চলছে। বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে সঠিক সমীক্ষার মাধ্যমে বেড়িবাঁধের পরিকল্পনা করা হবে।
