কেশবপুরে জলাবদ্ধতায় ১৯ হাজার বিঘা জমি অনাবাদি

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

আগাম বৃষ্টিপাতের প্রভাবে জলাবদ্ধতায় যশোরের কেশবপুরে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় চলতি আমন মওসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ফলে কৃষকরা প্রায় ১৯ হাজার বিঘা জমিতে আমন আবাদ করতে ব্যর্থ হয়ে ১২ হাজার টন ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে, প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির আমন ধানে এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর এ উপজেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭১ হাজার ৬২৫ বিঘা জমি। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ হাজার ৫৫০ টন। যার বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৩১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কিন্তু চলতি আমন মওসুম শুরুর আগেই আগাম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। অপরিকল্পিত মাছের ঘের, নদীর নাব্য না থাকাসহ মানবসৃষ্ট জলাবদ্ধতায় উপজেলাব্যাপী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। ফলে কৃষকরা নিম্নাঞ্চলের বিলগুলোতে আমন আবাদ করতে ব্যর্থ হয়। এছাড়া, কৃষকরা যে বীজতলা তৈরি করেছিল তাও আগাম বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হয়ে মাত্র ৫৩ হাজার ৭০০ বিঘা জমিতে ধান আবাদ হয়। জলাবদ্ধতায় ১৭ হাজার ৯২৫ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করতে ব্যর্থ হয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪৩ কোটি ২ লাখ টাকা।

সাবদিয়া গ্রামের কৃষক লিয়াকত হোসেন খোকা জানান, তিনি বুড়িভদ্রা নদীর চরে ৩ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদের জন্যে বীজতলা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু আগাম বৃষ্টিতে বুড়িভদ্রা নদী প্লাবিত হওয়ায় বীজতলাসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে যায়।

পানি বেশি হওয়ায় আমনও চাষ করতে ব্যর্থ হন। মজিদপুর গ্রামের কৃষক আবু বকর ও বাউশলা গ্রামের কৃষক আব্দুল আহাদ বলেন, আমন মওসুমে তারা প্রতি বছর ৩/৪ বিঘা করে জমিতে ধান আবাদ করেন। আগাম বৃষ্টিতে বিল প্লাবিত হওয়ায় কোনো ধান রোপণ করতে পারেননি। মঙ্গলকোট গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম বলেন, প্রতিবছর আগাম বৃষ্টি হলেও পানি সরে যায়। কিন্তু এ বছর অপরিকল্পিত মাছের ঘের ও নদীর নাব্যতার অভাবে বিলের পানি নিষ্কাশন হয়নি। এ মানব সৃষ্ট বন্যায় নিন্মিাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বিল পতিত জমিতে পরিণত হয়। এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে বাগদা বিল। মজিদপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল আলম জানান, এলাকার মজিদপুর, বাগদা, দেউলী, হিজলতলাসহ অধিকাংশ এলাকার নিম্নাঞ্চলের বিলগুলো জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। যে কারণে এসব বিলে কৃষকরা আমন ধানের আবাদ করতে পারেনি। তবে ঘন ঘন বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার উঁচু জমির আমন ধান ভালো হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, আগাম বৃষ্টি ও পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতায় নিন্মাঞ্চলের বিলগুলোতে আমন আবাদ না হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। যে কারণে কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ হাজার ৯৫০ টন ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়। তবে উঁচু জমির ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।